ইউক্রেনে কেন বিতর্কিত অস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে কৌশল পাল্টিয়েছে রাশিয়া। এ কারণে ইউক্রেনে বিতর্কিত অস্ত্র মানববিধ্বংসী স্থলমাইন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন গতকাল বুধবার এ কথা বলেন। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত পরিবর্তন মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছে।
অস্টিনের মতে, যুদ্ধক্ষেত্রে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত গাড়িবহরের বদলে পদাতিক বাহিনীর নেতৃত্বে ইউক্রেনের ভেতরে অগ্রসর হচ্ছে রাশিয়া। দেশটির যুদ্ধকৌশলে এমন পরিবর্তন ইউক্রেনে স্থলমাইন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে উৎসাহিত করেছে।
লাওস সফরকালে সাংবাদিকদের অস্টিন বলেন, ‘তারা (রুশ সেনাবাহিনী) আর অস্ত্রসজ্জিত গাড়িবহর নিয়ে এগোচ্ছে না। পদাতিক বাহিনী তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এ দল শত্রুপক্ষের কাছাকাছি যেতে এবং গাড়িবহরের জন্য রাস্তা তৈরি করে দিতে সক্ষম।’
অস্টিন আরও বলেন, ইউক্রেনীয় সেনাদের এমন কিছু দরকার, যা দিয়ে তাঁরা রুশ বাহিনীর গতি মন্থর করে দিতে পারেন।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উপপরিচালক ম্যারি ওয়ারহ্যাম বলেছেন, স্থলমাইন ব্যবহার করলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠবে। এ ছাড়া অন্যান্য ঝুঁকির প্রশ্নও তোলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এমন সময় ইউক্রেনে স্থলমাইন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, যার এক দিন আগেই দেশটি ইউক্রেনে নিজেদের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর সবুজ সংকেত দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এসব ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ায় হামলা চালাতে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল ইউক্রেন।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রশাসন ইউক্রেনকে আরও বেশি সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্য হাতে নিয়েছে।
ট্রাম্প বারবারই ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তার সমালোচনা করেছেন। তাঁর দাবি, তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে পারবেন। তবে কীভাবে সেটি করবেন, তা ব্যাখ্যা করেননি। তাঁর নানা মন্তব্য ইউক্রেন ও ইউরোপে উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে। কেননা, ট্রাম্পের মন্তব্য এবং ওই সমালোচনা এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে, মার্কিন সহায়তা ছাড়াই ইউক্রেনকে রাশিয়ার হামলা প্রতিহত করতে হতে পারে।
ইউক্রেনীয় সেনাদের এমন কিছু দরকার, যা দিয়ে তাঁরা রুশ বাহিনীর গতি মন্থর করে দিতে পারেন।
২০২২ সালে বাইডেন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজস্ব স্থলমাইন ব্যবহার নিষিদ্ধ করবে। এমন সময় তিনি এ কথা বলেছিলেন, যখন রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এ অস্ত্র ব্যবহার করছিল।
জাতিসংঘের মাইন নিষেধাজ্ঞা চুক্তিতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র স্বাক্ষর করেনি। দেশ দুটি অতীতে মানববিধ্বংসী মাইন ব্যবহারের কারণে সমালোচিত হয়।
তবে এ চুক্তিতে ইউক্রেন স্বাক্ষর করেছে। স্থলমাইন নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্রচারসংক্রান্ত নেটওয়ার্ক গতকাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ইউক্রেন ২০২২ সালে দেশটির সেনাদের স্থলমাইন ব্যবহারের অভিযোগ তদন্ত করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন এমন সময় ইউক্রেনে স্থলমাইন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, যার এক দিন আগেই দেশটি ইউক্রেনে নিজেদের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর সবুজ সংকেত দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এসব ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ায় হামলা চালাতে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল ইউক্রেন।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইউক্রেনে যেসব মাইন পাঠানো হবে, তা ব্যাটারির চার্জ শেষ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর হয়ে পড়বে। তাত্ত্বিকভাবে এটি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সাংবাদিকদের বলেন, এসব মাইন দুই সপ্তাহের মধ্যে বিস্ফোরিত না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর হয়ে পড়বে।
তবে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) উপপরিচালক ম্যারি ওয়ারহ্যাম বলেছেন, স্থলমাইন ব্যবহার করলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠবে। এ ছাড়া অন্যান্য ঝুঁকির প্রশ্নও তোলেন তিনি।