ন্যাটোর ঘোষণায় ‘হতাশ’ জেলেনস্কি
ইউক্রেনকে সদস্য করার সুনির্দিষ্ট সময়সীমার ঘোষণা না পেয়ে ‘হতাশ’ দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনই ছিল আলোচনার মুখ্য বিষয়। গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া সম্মেলনে ইতিমধ্যে সামরিক সহায়তা বাড়ানো ও ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে সদস্য করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে সদস্য করার সুনির্দিষ্ট সময়সীমার ঘোষণা না পেয়ে দৃশ্যত ‘হতাশ’ হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
গতকাল বুধবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করার কথা জেলেনস্কির। এতে সদস্যপদসহ ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়টি কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই উত্থাপনের কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। বিশেষ আমন্ত্রণে এ সম্মেলনে যোগ দেন তিনি।
ইউক্রেন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার অনেক কাছাকাছি।জেনস স্টোলটেনবার্গ, ন্যাটোপ্রধান
শর্ত পূরণ করলে ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার ঘোষণা আসে সম্মেলনের প্রথম দিনই। এ ছাড়া কিছু শর্ত শিথিলের আশ্বাস দেওয়া হয়। পাশাপাশি আলাদা নিরাপত্তা কাঠামোর মাধ্যমে ন্যাটো ও ইউক্রেনের মধ্যে সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ ইউক্রেনকে ন্যাটোতে আমন্ত্রণ জানানো হবে, কিংবা কবে নাগাদ দেশটিকে সদস্য করা হবে, তা বলা হয়নি। অবশ্য সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণায় সদস্যপদ প্রদানের প্রাথমিক বাধা দূরের ঘোষণা থাকতে পারে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে জেলেনস্কির উদ্বেগ কমাতে দীর্ঘ মেয়াদে অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণাও দিয়েছে ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭।
এত কিছুর পরও সদস্যপদ প্রদান নিয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমার ঘোষণা না পেয়ে কিছুটা হতাশই হয়েছেন জেলেনস্কি। সম্মেলনে আসার পথে কড়া ভাষায় দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, সম্মেলন থেকে সদস্যপদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা না করাটা হবে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘নজিরবিহীন’।
জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের কথা সরাসরি উল্লেখ না করে চূড়ান্ত ঘোষণায় কিছু নির্দিষ্ট বক্তব্য থাকার ইঙ্গিত তিনি পেয়েছেন। এতে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া নয়, বরং সদস্য হতে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, কোনো কোনো নেতা ইউক্রেনের সদস্যপদ নিয়ে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন, সেটা তিনি বুঝতে পারছেন। কারণ, কেউই একটি বিশ্বযুদ্ধে জড়াতে ইচ্ছুক নন।
সংবাদ সম্মেলনে ন্যাটোপ্রধান জেনস স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, ইউক্রেন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার অনেক কাছাকাছি। তিনি বলেন, কোন দেশ ন্যাটোর সদস্য হবে আর কোন দেশ হবে না, সেটা মস্কোকে ঠিক করে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।
অস্ত্র সরবরাহের অঙ্গীকার জি-৭-এর
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়তে এবং ভবিষ্যতে একই ধরনের যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ইউক্রেনকে ‘অব্যাহত’ অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে জি-৭।
গতকাল জোটের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইউক্রেনকে বর্তমানে রক্ষায় এবং ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে সক্ষম একটি টেকসই বাহিনী গড়ে তোলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট, দ্বিপক্ষীয় ও দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার অঙ্গীকার ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা প্রত্যেকে ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করব।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জি-৭-এর নতুন নিরাপত্তা অঙ্গীকারকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, এসব অঙ্গীকার ন্যাটোর সদস্যপদ প্রদানের বিকল্প হতে পারে না।
বাইডেনের আশ্বাস
সম্মেলনের শেষে জেলেনস্কিকে পাশে নিয়ে বাইডেন অঙ্গীকার করেন, আধুনিক ও উন্নত সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে জল, স্থল ও আকাশপথে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে ইউক্রেনকে সহযোগিতা করবে জি-৭।
বাইডেন বলেন, ‘আমাদের সব মিত্র একমত হয়েছে যে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ন্যাটোতেই। আমরা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিচ্ছি, আমাদের সহযোগিতা হবে দীর্ঘমেয়াদি এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।’
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনকে ন্যাটোসহ পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক সহায়তার বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিমিত্রি মেদভেদেভ। মঙ্গলবার বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে তিনি বলেন, ন্যাটোর এই সহায়তা ইউক্রেনে রাশিয়ার লক্ষ্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন মেদভেদেভ। তিনি বলেন, ‘পুরোই উন্মত্ত পশ্চিমারা অন্য কিছু বয়ে আনতে পারেনি...আসলেই, এটা একটি শেষ পরিণতি। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘনিয়ে আসছে।’
গুচ্ছবোমা দিলে একই ব্যবস্থা
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু মঙ্গলবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা, তথা গুচ্ছবোমা দিলে মস্কো একই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হবে। রুশ সংবাদ সংস্থাগুলো এই তথ্য জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, দখলদার রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের জন্য দেশটি ইউক্রেনকে গুচ্ছবোমা দেবে। তবে যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানিসহ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা কিয়েভকে গুচ্ছবোমা দেওয়া নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছে।