সাগরে ৬৭ দিন ভেসে থাকার পর জীবিত উদ্ধার, সঙ্গে ছিল ভাই ও ভাতিজার মরদেহ

সাগর থেকে উদ্ধারের পর মিখাইল পিচুগিনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার ওখটস্ক সাগরে নিখোঁজ হওয়া এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে দুই মাসের বেশি বায়ুভর্তি একটি ছোট নৌকায় ভেসে ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল তাঁর ভাই ও ভাতিজার মরদেহ।

রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

রুশ কর্মকর্তারা বলেন, ওই ব্যক্তির নাম মিখাইল পিচুগিন (৪৬)। মৎস্যজীবীরা তাঁকে উদ্ধার করেছেন। যে নৌকা থেকে মিখাইলকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, একই নৌকায় তাঁর ৪৯ বছর বয়সী ভাই সার্গেই ও ১৫ বছর বয়সী ভাতিজা ইলায়ার মরদেহ পাওয়া গেছে।

মিখাইল তাঁর ভাই ও ভাতিজাকে নিয়ে গত আগস্টের শুরুতে সাগরে ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। তাঁরা যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন, সেখান থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে নৌকাটি উদ্ধার করা হয়।

মিখাইলের স্ত্রী বলেন, ওই তিনজন সাগরে তিমি দেখতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে নিয়েছিলেন দুই সপ্তাহের খাবার। রিয়া নভোস্তিকে তিনি বলেন, শারীরিক ওজন বেশি হওয়ায় অনেক দিন যথেষ্ট না খেয়েও বেঁচে গেছেন মিখাইল। সাগরে ভ্রমণের জন্য যখন বেরিয়েছিলেন, তখন তাঁর ওজন ছিল ১০০ কেজি। ৬৭ দিন পর যখন তাঁকে উদ্ধার করা হয়, তখন ওজন অর্ধেকে নেমে গিয়েছিল তাঁর।

মিখাইল তাঁর ভাই ও ভাতিজাকে নিয়ে গত আগস্টের শুরুতে সাগরে ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। তাঁরা যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন, সেখান থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে নৌকাটি উদ্ধার করা হয়।

মিখাইলের স্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা এখনো বেশি কিছু জানি না। শুধু জানি, সে বেঁচে আছে...এটি অলৌকিক।’ মিখাইলের মেয়েরও ওই ভ্রমণে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে তিনি না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

রিয়া নভোস্তির প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই তিনজন নিখোঁজ হওয়ার পর একটি হেলিকপ্টার তাঁদের খুঁজতে বের হয়। কিন্তু কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত সোমবার মাছ ধরার একটি নৌকা কামচাটকা উপদ্বীপের উপকূল থেকে দূরে মিখাইলদের নৌকাটি দেখতে পায়।

ওই ঘটনার এক ভিডিওতে দেখা গেছে, লাইফ জ্যাকেট গায়ে শ্মশ্রুমণ্ডিত এক লোক (মিখাইল) মৎস্যশিকারিদের উদ্দেশে চিৎকার করে বলছেন, ‘আমার গায়ে আর কোনো শক্তি নেই।’ পরে তাঁকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওখটস্ক পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে শীতল সাগরগুলোর একটি। সেখানে মিখাইল এত দিন কীভাবে বেঁচে ছিলেন—এ নিয়ে রুশ নাবিকদের ইউনিয়নের দূরপ্রাচ্য শাখার প্রতিনিধি নিকোলাই সুখানভ বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে মাছের একটি বড় ভূমিকা থাকতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সব রসদ শেষ হওয়ার পর আপনি শুধু সাগরের মাছ খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন।’

মিখাইল এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন। চিকিৎসকেরা বলেছেন, এখন তাঁর অবস্থা কমবেশি স্থিতিশীল।

কৌঁসুলিরা বলেছেন, তাঁরা এ ঘটনায় একটি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করবেন। ছোট নৌকাটি এরই মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।

সাগরে দীর্ঘদিন ভেসে থাকার পর নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। একজন বিশেষজ্ঞ রিয়া নভোস্তিকে বলেন, ১৯৬০ সালে প্রশান্ত মহাসাগরে ৪৯ দিন ভেসে থাকার পর চার সোভিয়েত সৈনিককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল।