রাশিয়ার ভূখণ্ডে ঢুকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর নজিরবিহীন হামলা গতকাল শনিবার পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ার ভেতর ১০ কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার সকালে ইউক্রেনের সেনারা সীমান্ত পার হয়ে রাশিয়ার পশ্চিমের কুরস্ক অঞ্চলে হামলা শুরু করে মস্কোকে চমকে দেন। আড়াই বছরের যুদ্ধে রাশিয়ায় ইউক্রেনের এটি সবচেয়ে বড় হামলা।
ইউক্রেনের হামলার মুখে গতকাল ইউক্রেন সীমান্ত লাগোয়া তিনটি অঞ্চলে পাল্টা বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। মস্কো এ হামলাকে ‘সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচ দিনে রাশিয়ার ভেতরে ১০ কিলোমিটারের বেশি অগ্রসর হয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাচ্ছে। অঞ্চলটিতে আতঙ্ক ছাড়িয়ে পড়েছে।
কুরস্ক অঞ্চলের এক বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, ‘এটা ভয়ানক। তারা আমাদের ওপর বোমা হামলা চালাচ্ছে।’ সেখানকার এক নারী বাসিন্দা বলেন, ‘যুদ্ধ এবার আমাদের দুয়ারে এসে হাজির হয়েছে।’
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এরপর একাধিকবার রাশিয়ায় হামলা করে ইউক্রেন। তবে এবারের মতো রাশিয়ার এতটা ভেতরে ঢুকে কখনো হামলা করতে পারেনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, কুরস্কের সড়কে রাশিয়ার অন্তত ১৫টি সামরিক যান ধ্বংস হয়ে পড়ে রয়েছে। সামরিক যানগুলোতে হতাহত রুশ সেনাদেরও দেখা যায়।
এদিকে কুরস্ক অঞ্চলে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। কিয়েভ জানিয়েছে, গত শুক্রবার রাশিয়ার একটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায় তারা। সেই ঘাঁটির একটি গুদামে শত শত বোমা ছিল।
ইউক্রেনের দাবি, বিমানঘাঁটিতে হামলা করে তারা যেসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ ধ্বংস করেছে, সেগুলো দিয়ে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে হামলা চালাচ্ছিল রাশিয়া। কিয়েভ বলছে, সুখোই ৩৪ ও ৩৫ এবং মিগ-৩১ যুদ্ধবিমানের বহর মোতায়েন করে রাখার জন্য রাশিয়ার ওই বিমানঘাঁটির বিশেষ পরিচিতি রয়েছে।
কুরস্ক অঞ্চলে থাকা রাশিয়ার একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছাকাছিও লড়াই হচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। গতকাল এক বিবৃতিতে দুই পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন ও পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান রাফাল গ্রোসি।
রাশিয়ার পাল্টা বড় হামলা
বাড়তি সেনা মোতায়েন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার পরও ইউক্রেনীয় সেনাদের অগ্রসর হওয়া ঠেকাতে পারেনি রুশ বাহিনী। এ জন্য ইউক্রেনীয় বাহিনীকে মোকাবিলায় গতকাল কুরস্ক ছাড়াও বেলগরোদ ও ব্রায়নস্ক অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার আইন অনুযায়ী সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানের সময় দেশটির সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা পায়।
সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান ঘোষণা করায় এসব অঞ্চলে বাড়তি সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। ইউক্রেনীয় সেনাদের আরও অগ্রসর হওয়া ঠেকাতে অতিরিক্ত ট্যাংক, কামান, রকেট লঞ্চার ছাড়াও বিমানবাহিনীর বিশেষ ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশেষ অভিযানের জন্য তিন অঞ্চলের বাসিন্দাদের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া জায়গায় জায়গায় বসানো হয়েছে তল্লাশিচৌকি। সামরিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া এসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, রুশ বাহিনীর পাল্টা হামলায় এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের ২৮০ জনের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন। এর আগে রাশিয়া জানিয়েছিল, ট্যাংক, সাঁজোয়া যানসহ ইউক্রেনের প্রায় এক হাজার সেনা রাশিয়ায় অনুপ্রবেশ করেছেন। গতকাল রাশিয়ার সেনাবাহিনী জানায়, ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে তাদের সেনাদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে।