প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত নিষিদ্ধ রাসায়নিক দিয়ে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া
ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া নিষিদ্ধ রাসায়নিক ‘ক্লোরোপিকরিন’ ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই রাসায়নিকটি ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনে এই অস্ত্রটি দিয়ে হামলা ‘বিচ্ছিন্ন’ কোনো ঘটনা নয়। রাশিয়া হরহামেশাই তা ব্যবহার করছে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, এই অস্ত্র ব্যবহারে রাসায়নিক অস্ত্রবিষয়ক কনভেনশনের (সিডব্লিউসি) লঙ্ঘন হতে পারে। ১৯৩টি দেশের অনুসমর্থন করা ওই কনভেনশন অনুযায়ী, নতুন কোনো রাসায়নিক অস্ত্র সংগ্রহ বা নিজেদের কাছে থাকা এ ধরনের অস্ত্রের উন্নয়ন ঘটানো যাবে না।
সিডব্লিউসি অনুযায়ী, কোনো যুদ্ধে ক্লোরোপিকরিনের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (সিডিসি) বলছে, তেল চিটচিটে এই রাসায়নিকটি ব্যবহারের ফলে মানুষের ফুসফুস, চোখ ও ত্বকে প্রদাহ হয়। এতে বমি, বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য অনুযায়ী, সুরক্ষিত অবস্থান থেকে ইউক্রেনের সেনাদের পিছু হটাতে ক্লোরোপিকরিন ব্যবহার করেছে রাশিয়া। তবে এ অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে মস্কো। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, সিডব্লিউসির অধীনের বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলে মস্কো।
ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে এর আগে রাশিয়াকে সতর্ক করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউক্রেনে হামলা শুরুর কয়েক সপ্তাহ পর ২০২২ সালের মার্চে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেন, তাহলে এর জন্য তাঁকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে।
এরপরও ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্র দিয়ে মস্কো হামলা চালিয়েছে বলে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত রাসায়নিক দিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ এনেছেন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যালরি স্টেওয়ার্ট। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় রাসায়নিক হামলার শিকার হওয়ার কথা বলেছেন ইউক্রেনের সেনারাও।
চলতি বছরের শুরুর দিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইউক্রেনে ‘সিএস’ ও ‘সিএন’ কাঁদানে গ্যাস যুক্ত গ্রেনেড ব্যবহার করছে রুশ বাহিনী। বিষাক্ত এই গ্যাসের সংস্পর্শে এসে অন্তত ৫০০ ইউক্রেনীয় সেনাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। আর এক সেনা কাঁদানে গ্যাসে দম বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।
রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদনে জড়িত থাকায় রাশিয়ার তিনটি সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। দেশটির জৈবিক ও রাসায়নিক অস্ত্র প্রকল্পের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে অভিযোগ ওয়াশিংটনের। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করায় আরও একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সিডব্লিউসি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ কার্যক্রমে যুক্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য অর্গানাইজেশন ফর দ্য কেমিক্যাল ওয়েপনস (ওপিসিডব্লিউ)। ২০১৭ সালে সংস্থাটি বলেছিল, সিডব্লিউসি অনুযায়ী স্নায়ুযুদ্ধের সময় মজুত করা শেষ রাসায়নিক অস্ত্রটি ধ্বংস করেছে রাশিয়া।
তবে ২০১৭ সাল থেকে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে হামলার অন্তত দুটি অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে একবার হামলা চালানো হয়েছিল দেশটির একজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তার ওপর। আর ২০২০ সালে রাসায়নিক হামলার শিকার হয়েছিলেন সম্প্রতি কারাগারে মৃত্যু হওয়া রুশ বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি।
৯ মে বিজয় দিবস উদ্যাপন করতে যাচ্ছে রাশিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় উপলক্ষে এ দিনটি উদ্যাপন করা হয়। এর আগে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে ধারাবাহিক অগ্রগতি পাচ্ছে রাশিয়া। এ অঞ্চলে বেশির ভাগ লড়াই চলছে কিয়েভ নিয়ন্ত্রিত চাসিভ ইয়ার শহর ঘিরে। বিজয় দিবসের আগেই শহরটি দখল করতে চাচ্ছে মস্কো।