মস্কোয় হামলার সময় শত মানুষকে বাঁচতে সহায়তা করেছিল যে কিশোর
রাশিয়ার মস্কোতে কনসার্ট হলে হামলার সময় ১০০ জনের বেশি মানুষকে নিরাপদে সরে যেতে সহযোগিতা করেছিল একটি কিশোর। সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এত মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সহায়তা করায় অনেকেই তার প্রশংসা করছেন। বীর আখ্যা দিয়ে পুরস্কৃত করছেন কেউ কেউ।
রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা রাপ্টলিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেদিনের সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে ওই কিশোর।
১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরের নাম ইসলাম খালিলভ। হামলার স্থান ক্রোকাস সিটি হলের একটি বিশ্রামাগারে পরিচারক হিসেবে কর্মরত সে। এ কনসার্ট হলেই গত শুক্রবার সন্ধ্যায় হামলা চালায় চার বন্দুকধারী।
ক্রোকাস সিটি হলের অবস্থান মস্কোর উপকণ্ঠে। সেখানকার কনসার্ট হলে রাশিয়ার রক ব্যান্ড ‘পিকনিক’-এর পরিবেশনা উপভোগ করতে অনেক সংগীতপ্রেমী জড়ো হন। হঠাৎই এক দল বন্দুকধারী ভবনটিতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি ছুড়তে শুরু করে। এরপর কনসার্ট হলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, এ হামলায় অন্তত ১৩৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত ১৮০ জন।
সাক্ষাৎকারে খালিলভ বলেছে, লোকজন যখন এসকেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে দৌড়াতে শুরু করল, তখনই সে বুঝতে পারে খারাপ কিছু একটা ঘটেছে। ক্রোকাস হলে চাকরির সুবাদে পুরো এলাকা তার পরিচিত ছিল। সে কারণে আতঙ্কিত দর্শনার্থীদের অনেককে সে হামলাস্থল থেকে নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার দিকনির্দেশনা দিতে পেরেছিল।
খালিলভ বলে, ‘আমি হলজুড়ে ঘুরে ঘুরে চিৎকার করতে শুরু করলাম, ‘বন্ধুরা, গোলাগুলি চলছে। সবাই প্রদর্শনী স্থলের দিকে চলে যান।’ তাঁদের কোথায় যেতে হবে, তা আমি দেখিয়ে দিচ্ছিলাম এবং সবাইকে সহযোগিতা করছিলাম।’
খালিলভ জানায়, সে নিজে পুরো একটি দলের পেছনে দৌড়াচ্ছিল। কারণ, নিশ্চিত হতে চাচ্ছিল, কেউ যেন তার পেছনে না পড়ে।
কিশোর খালিলভ স্বীকার করেছে, পুরোটা সময় সে নিজেও আতঙ্কে ছিল। তারপরও জরুরি পরিস্থিতিতে লোকজনকে কীভাবে নিরাপদে সরিয়ে নিতে হবে, সে নির্দেশনা তাঁর মাথায় ছিল। এমন নির্দেশনাগুলো তাকে আগেই দেওয়া ছিল।
সাক্ষাৎকারে কিশোর জানায়, একপর্যায়ে এক বন্দুকধারীও তার নজরে আসে। তিনি একটি অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এক ব্যক্তির ওপর গুলি চালাতেও দেখেছে সে। ভয়ংকর সে দৃশ্য এখনো সে ভুলতে পারছে না।
১৫ বছর বয়সী এই কিশোর বলছে, সে নিজেকে বীর মনে করে না। সে শুধু তার কাজটি করেছে।
খালিলভ মনে করে, নিজের জীবন দিয়ে যদি শত মানুষকে বাঁচানো যায়, তবে সেটাই ভালো। এ বোধটুকুই তাকে সেদিন ভয় জয় করতে সহযোগিতা করেছে।
খালিলভের এ সাহসিকতা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার পর অনেকে তার প্রশংসা করছেন। কেউ কেউ তার সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কারও দিচ্ছেন। তার প্রিয় ফুটবল ক্লাব এফসি স্পারটাক মস্কো তাদের একটি বৈঠকে ডেকেছিল তাকে। সেখানে ওই ক্লাবের ম্যাচগুলো বিনা মূল্যে দেখার পাস দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার জনপ্রিয় র্যাপ শিল্পী মোরজেনস্তার্ন বলেছেন, তিনি ওই কিশোরকে ১০ লাখ রুবল পুরস্কার দিয়েছেন। খালিলভও সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
রাশিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা মুফতি রাবিল গাইনুতদিন ঘোষণা দিয়েছেন, খালিলভকে তার সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে একটি পদক দেওয়া হবে।