চার্লসের রাজ্যাভিষেকে কার ছিল কেমন সাজ
যুক্তরাজ্যের রাজা হিসেবে তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে গতকাল শনিবার রঙিন সাজে সেজে উঠেছিল। এই দিন একই সঙ্গে রাজ্যাভিষেক হয়েছে চার্লসের স্ত্রী কুইন কনসোর্ট ক্যামিলারও। রাজা–রানি ও রাজপরিবারের সদস্য ঐহিত্যবাহী পোশাকে হাজির হয়েছিলেন এ অনুষ্ঠানে। আর দেশ-বিদেশের নেতা ও তারকারাও চোখ ধাঁধানো পোশাক পরে গিয়েছিলেন রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে।
১৯৩৭ সালে রাজ্যাভিষেকের সময় রাজা ষষ্ঠ জর্জ লাল রঙের মখমলের রোব অব স্টেট পরেছিলেন। প্রায় ৮৬ বছর পর গতকাল দাদার পরা ওই মখমলি রোব অব স্টেট পরেই নিজের রাজ্যাভিষেকে এসেছিলেন চার্লস। এ ছাড়া তিনি রাজ্যাভিষেকর জন্য নির্ধারিত ক্রিমসন রঙের টিউনিক, সিল্কের তৈরি ক্রিম রঙের ওভারশার্ট ও রাজকীয় নেভাল ট্রাউজার পরেছিলেন। তবে রাজ্যাভিষেকের রাজপোশাকে পূর্বসূরিদের রীতির পাশাপাশি কিছু ব্যতিক্রমও রেখেছিলেন চার্লস।
ঐতিহাসিক উল্লেখযোগ্য পোশাকের মধ্যে রাজা পরেছিলেন স্বর্ণখচিত সিল্কের সুপারটিউনিকা (কোট), রাজ্যাভিষেক তরবারির বেল্ট ও এর ওপরে সোনায় মোড়ানো কাপড়ের ইম্পেরিয়াল ম্যান্টল (গাউন)। ১৮২১ সালে রাজা চতুর্থ জর্জের জন্য এই ইম্পেরিয়াল ম্যান্টলটি তৈরি করা হয়েছিল। পরে রাজা পঞ্চম জর্জ, রাজা ষষ্ঠ জর্জ ও রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের সময়ও এটি ব্যবহার করা হয়। এটি প্রাচীনতম রাজপোশাক। রাজা তৃতীয় চার্লসও গতকাল এটি গায়ে দিয়েই মাথায় মুকুট নেন।
রাজা চার্লসের ডান হাতে ছিল গিল্ট মেটাল থ্রেড দিয়ে এমব্রয়ডারি করা একটি সাদা চামড়ার দস্তানা। চার্লসের মাথায় ঐতিহাসিক যে রাজমুকুটটি পরানো হয় তা ১৬৬১ সালে তৈরি করা হয়েছিল রাজা দ্বিতীয় চার্লসের জন্য। অ্যাংলো-স্যাক্সন রাজা ও সেন্ট এডওয়ার্ড দ্য কনফেসরের নামানুসারে মুকুটটির নাম দেওয়া হয়েছে। এডওয়ার্ড মুকুটটিকে পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এটি কয়েক শ বছর ধরে রাজ্যাভিষেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি এ মুকুট রাজার কর্তৃত্বের প্রতীক। সর্বশেষ ১৯৫৩ সালে নিজের রাজ্যাভিষেকে সেন্ট এডওয়ার্ড মুকুটটি পরেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এবার ৭০ বছর পর তাঁর ছেলে চার্লস নিজের রাজ্যাভিষেকে মুকুটটি পরলেন।
রাজা চার্লসের স্ত্রী কুইন কনসোর্ট ক্যামিলাও একটি আইভরি গাউনের ওপর রোব অব স্টেট পরে রাজ্যাভিষেকে এসেছিলেন। ১৯৫৩ সালে প্রয়াত রানী এলিজাবেথের জন্য রুপা ও সোনা দিয়ে ফুলের সূচিকর্ম করে এটি তৈরি করেছিলেন ব্রিটিশ নকশাকার ব্রুস ওল্ডফিল্ড।
রাজা ও রানি দুজনেই বেগুনি রঙের রোব অব স্টেট পরে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে ত্যাগ করেন। রাজা ষষ্ঠ জর্জের বেগুনি রঙের রোব অব স্টেটই পরেছিলেন চার্লস। আর ক্যামিলার বেগুনি রঙের রোব অব স্টেটটি রয়্যাল স্কুল অব নিডলওয়ার্কের নকশায় তৈরি করা হয়। প্রকৃতির থিম দিয়ে সূচিকর্ম ছিল এতে।
বাকিংহাম প্যালেস বলেছে, এই প্রথমবারের মতো করোনেশন রোব অব স্টেটে মৌমাছি, প্রজাপতি, বিটল ও শুঁয়োপোকাসহ প্রকৃতির নানা উপাদানের নকশা ছিল। এটা প্রকৃতির প্রতি রাজার ভালোবাসার প্রতিফলন।
অনুষ্ঠানে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস উইলিয়াম ও ক্যাথরিন তাঁদের নিয়মিত পোশাকের ওপর ফরমাল রোবস ও ম্যান্টল (গাউন) পরেছিলেন। ওয়েলশ গার্ডদের আনুষ্ঠানিক পোশাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী টায়রার পরিবর্তে রুপা ও স্ফটিক পাতা দিয়ে তৈরি শিরস্ত্রাণ পরেছিলেন।
কেট মিডলটন ও তাঁর মেয়ে শার্লট দুজনেই আইভরি সিল্কের ক্রেপ ফ্রক পরেছিলেন। পোশাকটি গোলাপ, ড্যাফোডিল ও শামরকসহ নানা ফুলের মোটিফের এমব্রয়ডারি করা। পোশাকটির নকশাকার আলেকজান্ডার ম্যাককুইন। ২০১১ সালে বিয়ের সময় কেট একই ধরনের পোশাক পরেছিলেন।
অনুষ্ঠানে রাজা চার্লসের ভাইবোনেরাও রাজপরিবারের ঐহিত্যবাহী পোশাক পরেছিলেন। তাঁর ভাতিজি প্রিন্সেস বিয়াট্রিস, ইউজেনি, জারা ও লেডি লুইস ফুসিয়া ফুল, নীল ও ফ্লোরাল প্রিন্টের পোশাক বা কোট পরেছিলেন। আর রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে চার্লসের ছেলে প্রিন্স হ্যারির আনুষ্ঠানিক কোনো ভূমিকা ছিল না। এ কারণে তিনি সকালের পোশাক পরেই ছিলেন।
তারকা অতিথিদের মধ্যে ব্রিটিশ অভিনেত্রী এমা থম্পসন গোলাপের নকশায় করা একটি লাল কোট পরেছিলেন। মার্কিন গায়িকা কেটি পেরি লাইলাক ছোট হাতার স্কার্ট স্যুটের সঙ্গে অপেরা গ্লাভস ও টুপি পরে এসেছিলেন। আজ রোববার তিনি উইন্ডসরে রাজ্যাভিষেক কনসার্টে গান গাইবেন।
পর্দায় রানি এলিজাবেথ প্রথম ও রানি ভিক্টোরিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রবীন ব্রিটিশ অভিনেত্রী ম্যাগি স্মিথ ও জুডি ডেঞ্চ। তাঁরাও গতকাল রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা নীল রঙের বিভিন্ন শেডের পোশাক পরে এসেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার সংগীত শিল্পী নিক কেভ ও মার্কিন সংগীত তারকা লিওনেল রিচি আজকের রাজ্যাভিষেক কনসার্টে গান গাইবেন। তাঁরা দুজনেই কালো রঙের থ্রি–পিস স্যুট পরেছিলেন। আর হলুদ কোটি পরে এসেছিলেন ব্রিটিশ অভিনেতা স্টিফেনস ফ্রাই।
ব্লক রঙের পোশাকে এসেছিলেন মার্কিন ও ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ও ব্রিজিত ম্যাঁখো। পাউডার ব্লু ও ফ্যাকাশে গোলাপী পোশাকে নজর কেড়েছেন ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা।