রুশ হামলায় কিয়েভের অর্ধেক মানুষ এখনো বিদ্যুৎহীন
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ৯ মাস পেরিয়েছে। কয়েক দিন ধরে দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা জোরদার করেছে রাশিয়ার বাহিনী। দুদিন আগের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বিদ্যুৎ-ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসে। শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখনো বিদ্যুৎহীন। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।
স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে লিখেছেন, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কিয়েভের বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বাড়িতে সরবরাহ সচল করা হয়েছে। এরপরও তীব্র শীতের মধ্যে কিয়েভের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখনো অন্ধকারে।
ইউক্রেনের জাতীয় বিদ্যুৎ পরিচালন প্রতিষ্ঠান ইউক্রেনারগোর প্রধান ভলোদিমির কুদরিতস্কি বলেন, ‘সাম্প্রতিক রাশিয়ার হামলায় পুরো ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। আমরা কঠিন একটি সময় পার করছি। তবে দ্রুত মেরামতকাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’
দেশজুড়ে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহব্যবস্থার ওপর গত কয়েক দিনে রাশিয়া প্রায় ৭০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে দেশজুড়ে লাখ লাখ ইউক্রেনীয়কে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রাত কাটাতে হচ্ছে। বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর রাশিয়ার এমন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলছে ইউক্রেন ও তার মিত্ররা। তবে মস্কো জানিয়েছে, তারা শুধু ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত অবকাঠামোয় হামলা চালাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিতে ইউরোপের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আজ লিথুয়ানিয়ায় এক সম্মেলনে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ভাষণ দেন জেলেনস্কি। এ সময় তিনি ইউরোপের দেশগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘এখানে কোনো বিভক্তি নেই। আমাদের এই ঐক্য ধরে রাখতে হবে এবং রাশিয়াকে প্রতিহত করার লক্ষ্যপূরণে এগিয়ে যেতে হবে।’
প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের প্রস্তাবে জার্মানির না
ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠাতে পোল্যান্ডের দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে জার্মানি। বার্লিনের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, এ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শুধু পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যভুক্ত দেশগুলোয় ব্যবহারের জন্য প্রযোজ্য। তাই ইউক্রেনে তা সরবরাহ করা হবে না।
মার্কিন প্রতিষ্ঠান রেথিয়নের তৈরি প্যাট্রিয়টের মতো স্থলভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাগুলো মূলত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়। গত সপ্তাহে পোল্যান্ডের ভূখণ্ডে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে। এতে দুজন নিহত হন। এ ঘটনার পর দেশটির আকাশসীমা সুরক্ষায় ওয়ারশকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠানোর প্রস্তাব দেয় বার্লিন।
জবাবে গত বুধবার পোলিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারিউস ব্লাসজ্যাক ওই ব্যবস্থা তাঁর দেশের বদলে ইউক্রেনে পাঠাতে জার্মানিকে অনুরোধ করেছেন। তবে গতকাল জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামব্রেখট বলেন, তার দেশ পোল্যান্ডের এ প্রস্তাব মানতে পারছে না। ন্যাটোভুক্ত এলাকার বাইরে এ ব্যবস্থা মোতায়েন করতে হলে আগে জোট ও মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
জার্মানির এমন অবস্থানের পর আজ ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা মোতায়েনের বিষয়ে জার্মানি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা আজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জার্মানি এই ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা সরবরাহ করলে ইউক্রেন ও পোল্যান্ড দুই দেশের সীমান্ত এলাকার সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জার্মানিকেই নিতে হবে।