ফ্রান্সে জোট সরকার গঠন করা নিয়ে বিবাদে মাখোঁর উত্তরসূরিরা
ফ্রান্সে নির্বাচনী বাজিতে এমানুয়েল মাখোঁ ব্যর্থ হওয়ার পর জোট সরকার গঠন করা নিয়ে সৃষ্ট বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন প্রেসিডেন্টের দুই মিত্র। মাখোঁর আপাত উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন তাঁরা।
প্রেসিডেন্ট মাখোঁ গত ৯ জুন দেশে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। দুই দফায় ভোট গ্রহণের (৩০ জুন ও ৭ জুলাই) পর দেখা যায়, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নিজেদের প্রতিনিধিত্বের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হারিয়েছে তাঁর দল। নির্বাচনে বামপন্থী জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) জয়ী হলেও তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
এ অবস্থায় মাখোঁর শিবিরে যেটুকু আশা অবশিষ্ট আছে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই শুরু করেছেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আতাল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন। দুজনেরই আশা, তাঁরা নিজেদের পছন্দের দলগুলো নিয়ে জোট সরকার গঠন করতে সক্ষম হবেন।
মাখোঁর পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমার পছন্দ হয়নি। কিন্তু আমি চুপ থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি।
সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজির অনুগত ডারমানিন ফ্রেঞ্চ কনজারভেটিভ ফোর্সের একজন তরুণ কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। মধ্য ডানপন্থী দলগুলোর সমর্থনে জোট সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। আর সাবেক সমাজতন্ত্রী আতাল ইঙ্গিত দিচ্ছেন বাম ও মধ্যপন্থীদের মাঝামাঝি ধারার দলগুলোর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনে নিজ আগ্রহের দিকে। সরকারে থাকাকালে তিনি ডানমুখী নীতি বাস্তবায়ন করেছেন।
এ চেষ্টায় দুজনের একজন যদি জয়ী হন, তবে ২০২৭ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাখোঁর দল থেকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ জোরদারে সচেষ্ট হবেন তিনি।
রক্ষণশীল অনুগত বনাম মধ্যপন্থী বিদ্রোহী
পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে-পরে দুই সময়ই নিজ নেতৃত্ব নিয়ে নজিরবিহীন প্রশ্নের মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। নির্বাচনে দলের জয় নিয়ে শঙ্কায় থাকা প্রার্থীরা প্রকাশ্যেই তাঁকে এড়িয়ে চলেছেন। অন্যদিকে সরকারে থাকা প্রধানমন্ত্রী আতালের মতো প্রভাবশালী নেতারা মাখোঁর আগাম নির্বাচন আহ্বানের সিদ্ধান্ত থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখেন।
আতাল (৩৫) এ বছরের শুরুতে নিয়োগ পান এবং দলের প্রচারে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন। প্রার্থীদের পক্ষে সমর্থন আদায়ে সফর করেন অনেকগুলো। মাখোঁ শিবিরের আত্মপক্ষ সমর্থনে মুখোমুখি হন গণমাধ্যমের।
কিন্তু পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া নিয়ে নির্বাচনের রাতে মাখোঁর অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তের প্রকাশ্য বিরোধিতা করেন আতাল। তিনি বলেন, ‘পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমার পছন্দ হয়নি। কিন্তু আমি চুপ থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি।’ সরকারপ্রধান আতালের এমন লড়াকু মনোভাব তাঁকে দলের অন্য প্রতিবাদী আইনপ্রণেতাদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজির অনুগত ডারমানিন ফ্রেঞ্চ কনজারভেটিভ ফোর্সের একজন তরুণ কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। মধ্য ডানপন্থী দলগুলোর সমর্থনে জোট সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। আর সাবেক সমাজতন্ত্রী আতাল ইঙ্গিত দিচ্ছেন বাম ও মধ্যপন্থীদের মাঝামাঝি ধারার দলগুলোর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনে নিজ আগ্রহের দিকে।
অন্যদিকে ডারমানিন বিদায়ী মন্ত্রিসভার গুটিকয় সদস্যের একজন, যিনি প্রেসিডেন্ট মাখোঁর নতুন নির্বাচন আহ্বানের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন। মাখোঁর সিদ্ধান্তকে ‘সাহসী’ আখ্যা দিয়ে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
অভিবাসন ও নিরাপত্তা বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য পরিচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডারমানিন। শাসনব্যবস্থাকে তিনি ‘ডানমুখী’ করার আহ্বান জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে দেশের বাম ধারার সামাজিক বণ্টন নীতি রক্ষায় সচেষ্ট তিনি। নির্বাচনী প্রচারে তিনি বলেছেন, আগামী দিনে ন্যায়বিচার, অভিবাসন, অপরাধ ও সামাজিক সেবায় কঠোর অবস্থানের জয় হবে।
ডারমানিন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এখন রক্ষণশীল রিপাবলিকান গ্রুপের সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করছেন। অবশ্য নবগঠিত এ গ্রুপের প্রেসিডেন্ট লরেন ওয়াকুয়েজ কোনো জোট গঠনের সম্ভাবনা তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দিয়েছেন।
বিপরীতে আতাল ‘বহুপক্ষীয় অ্যাসেম্বলি’তে আগ্রহী; যেখানে অতি বাম ও অতি ডান শক্তি ছাড়া থাকবে আর সবার অংশগ্রহণ। তাঁর কথায়, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে ডান, মধ্য ও বাম ধারার সমন্বয়ে রিপাবলিকান রাজনৈতিক শক্তিই পারে ফরাসি জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে।’
আগামী দিনে ন্যায়বিচার, অভিবাসন, অপরাধ ও সামাজিক সেবায় কঠোর অবস্থানের জয় হবে।
এদিকে গৃহবিবাদ নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। গত বুধবার প্রকাশিত একটি চিঠিতে রিপাবলিকান ইনস্টিটিউশন, আইনের শাসন, সংসদীয় গণতন্ত্র, ইউরোপীয় দর্শন ও ফ্রান্সের স্বাধীনতা রক্ষার ধারক–বাহক সব রাজনৈতিক দলের প্রতি সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে আন্তরিক সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এখন কী হবে
ইতিমধ্যে নির্বাচনে জেতা বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্ট সরকার গঠনের জন্য তাদের ডাকতে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে; যেখানে তাদের মধ্য থেকেই হবেন দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী। আগামী বৃহস্পতিবারের (১৮ জুলাই) মধ্যে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। এতে একধরনের সমঝোতা হয়ে গেছে—এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।