কানাডার দাবানলের ধোঁয়া ইউরোপের আকাশেও

কানাডার চার শতাধিক জায়গায় ছড়িয়ে পড়া দাবানল নেভাতে সাহায্য চেয়েছে দেশটি।

কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপে ক্যামেরন ব্লাফস বনাঞ্চল দাবানলের ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া। ৯ জুন, ২০২৩
ছবি: রয়টার্স

কানাডার ভয়াবহ দাবানলের ধোঁয়া ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের আকাশ ঢেকে দিয়েছে। সেই দাবানলের ধোঁয়া এখন পৌঁছে গেছে নরওয়েতে। শেষ পর্যন্ত এই ধোঁয়া দক্ষিণ ইউরোপেও পৌঁছে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত শুক্রবার নরওয়ের এক কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন।

জলবায়ু পূর্বাভাস মডেল ব্যবহার করে নরওয়ের জলবায়ু ও পরিবেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট এনআইএলইউর বায়ুমণ্ডল ও জলবায়ুবিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, কীভাবে ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে এগিয়ে আসছে। আরও দক্ষিণে যাওয়ার আগে এ ধোঁয়া স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। তবে এ ধোঁয়া সেখানে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে বলে মনে করছেন না তাঁরা।

ইনস্টিটিউটটি টুইটারে বলেছে, কানাডার দাবানলের ধোঁয়া এখনই নরওয়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যে এটি ইউরোপের অন্যান্য অংশেও পৌঁছে যাবে।

স্বাধীন এই গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আরও বলেছে, এই ধোঁয়া ১ জুন গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ডের বায়ুমণ্ডলে প্রবাহিত হতে শুরু করে। নরওয়ের দক্ষিণাঞ্চলের পর্যবেক্ষণকেন্দ্রগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ানো ক্ষুদ্র কণার ক্রমবর্ধমান ঘনত্ব রেকর্ড করেছে।

এনআইএলইউর জ্যেষ্ঠ গবেষক নিকোলাউস ইভাঞ্জেলিউ বলেছেন, ‘আমরা হয়তো কিছু ধোঁয়াশা দেখতে পাব এবং ধোঁয়ার গন্ধ পাব। তবে নরওয়ের বাতাসে থাকা ক্ষুদ্র কণার পরিমাণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার মতো ততটা বেশি বলে আমরা মনে করি না। যখন ধোঁয়া ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছায়, তখন ক্ষুদ্র কণার পরিমাণ অনেক কম থাকে।’

এক বিবৃতিতে ইভাঞ্জেলিউ বলেন, কানাডায় দাবানলে আরও বিস্তৃত এলাকা পুড়তে থাকায় নরওয়ের ওপর দিয়ে এই ধোঁয়া বয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের পশ্চিম কিসকাতিনাউ নদীর তীরের বনাঞ্চলে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া। ৯ জুন
ছবি: রয়টার্স

দাবানল বাড়বে

এনআইএলইউর গবেষণা পরিচালক জেতিল তোরসেথ বলেন, জলবায়ু সংকটের কারণে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার ফলে দাবানলের ঘটনা আরও বেশি দেখা যাবে এবং দাবানলের মাত্রাও তুলনামূলক বেশি হবে।

এই গবেষক বলেন, ‘আমি মনে করি, এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বেশি দেখা যাবে। আর অবশ্যই সেগুলোর প্রভাব জলবায়ুতে পড়বে।’

কানাডার, বিশেষ করে কুইবেক প্রদেশের দাবানলের ফলে দেশটি ও যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল স্বাস্থ্যঝুঁকি মাত্রার দূষণের কবলে পড়েছে। বিপুল পরিমাণ অস্বাস্থ্যকর বাতাস যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে গত বুধবার ছিল কানাডার দাবানলে সৃষ্ট সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দিন। একই দিন নিউইয়র্ক ও ডেট্রয়েটের বায়ুর মান ছিল বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ।

দাবানলের ধোঁয়ার কারণে ১১ কোটি মার্কিনের জন্য দূষিত বায়ুর সতর্কতা জারি করা হয়, গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরগুলোর ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। এমনকি মেজর লিগ বেসবলের ম্যাচ স্থগিত করতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে করোনাভাইরাস মহামারির সময়কার মাস্ক পরার সময়ে ফিরতে হয় লোকজনকে।

সাহায্যের পাশাপাশি বৃষ্টির আশা

এদিকে দেশের চার শতাধিক জায়গায় ছড়িয়ে পড়া দাবানল নেভাতে সাহায্য চেয়েছে কানাডা। পাশাপাশি বৃষ্টির আশায় আছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

কুইবেক প্রশাসন বলেছে, ওই প্রদেশের ১০০টি বনে ছড়িয়ে পড়া আগুন নেভাতে বৃষ্টি ও বাইরের সাহায্য প্রয়োজন। দাবানলের কারণে সৃষ্ট ধোঁয়ার কারণে আটলান্টিক উপকূলের শহরগুলোতে শ্বাস নেওয়াটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, আগামীকাল সোমবার নাগাদ এই প্রদেশে দাবানল নেভানোর কাজে অংশ নেওয়া অগ্নিনির্বাপণকর্মীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১ হাজার ২০০। তাঁদের মধ্যে থাকবেন ফ্রান্স থেকে আসা শতাধিক অগ্নিনির্বাপণকর্মীও।