রাশিয়ার ১০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলে নেওয়ার দাবি ইউক্রেনের
সীমান্ত পেরিয়ে আক্রমণ শুরু করার পর রাশিয়ার ভূখণ্ডের এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলে নেওয়ার দাবি করেছেন ইউক্রেনের শীর্ষ কমান্ডার ওলেকসান্দর সিরস্কি।
প্রায় আড়াই বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর এই প্রথম শত্রুর ভূমিতে এত বৃহৎ আকারে পাল্টা–অভিযান চালাচ্ছে কিয়েভ।
সিরস্কি বলেন, শুরু করার সাত দিন পরও রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ‘ইউক্রেনের সামরিক অভিযান চলছে’।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া অন্যদের জন্য যুদ্ধ নিয়ে এসেছে এবং এখন এটা রাশিয়ার দিকেই ফিরে আসছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের এই অভিযানকে ‘বড় উসকানি’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে ‘আমাদের ভূমি থেকে শত্রুদের লাথি মেরে তাড়িয়ে দিতে’ বলেছেন।
এদিকে ইউক্রেনের অভিযান শুরুর পর নিরাপত্তার খাতিরে কুরস্ক অঞ্চল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আরও প্রায় ৫৯ হাজার জনকে সরে যেতে বলা হয়েছে।
কুরস্ক অঞ্চলের গভর্নর বলেছেন, ওই অঞ্চলের প্রায় ২৮টি গ্রাম এখন ইউক্রেনের সেনাদের দখলে। অভিযানে এখন পর্যন্ত ১২ বেসামরিক রুশ নিহত হয়েছেন। সেখানে ‘এখন কঠিন পরিস্থিতি’।
গত ৬ আগস্ট মঙ্গলবার হঠাৎ করেই সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করে ইউক্রেনের সেনারা। তারা এরই মধ্যে সীমান্তের ৩০ কিলোমিটারের বেশি গভীরে প্রবেশ করে গেছে।
এই আক্রমণ ইউক্রেনের মনোবল বাড়িয়েছে বলে বলা হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই কৌশলটি ইউক্রেনের জন্য নতুন বিপদ ডেকে আনতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, এই অনুপ্রবেশের ফলে মস্কো খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে তারা ইউক্রেনের বেসামরিক লোকজন এবং অবকাঠামোর ওপর তাদের আক্রমণ দ্বিগুণ করতে পারে।
গতকাল সোমবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পুতিনের একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘শত্রুর সুস্পষ্ট লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো বিভেদ, কলহ, মানুষকে ভয় দেখানো এবং রাশিয়ার সামাজিক ঐক্য ও সংহতি নষ্ট করা।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে পুতিন তাঁর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে পুতিন আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ অবশ্যই আমাদের ভূখণ্ড থেকে শত্রুদের বিতাড়িত করা।’
কুরস্ক অঞ্চলের গভর্নর জানান, ইউক্রেনের অভিযান শুরু হওয়ার পর ওই অঞ্চল থেকে প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার মানুষকে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি পুতিনকে আরও বলেন, কুরস্কের যেসব এলাকা এখন ইউক্রেনের সেনাদের দখলে, সেখানে প্রায় দুই হাজার রুশ নাগরিক রয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, ‘তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।’
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে তিনি জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তাঁরা যেন জানালাবিহীন এবং মজবুত দেয়ালের ঘরে আশ্রয় নেয়।
কুরস্কের পাশেই রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চল। বেলগোরোদের গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ গ্লাদকোভ ওই অঞ্চলের ক্রাসনায়া ইয়ারুগা জেলা থেকে প্রায় ১১ হাজার মানুষকে সরে যেতে বলেছেন। বলেছেন, ‘সীমান্তে শত্রুদের তৎপরতার কারণে তাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’
তিনিও ক্ষেপণাস্ত্র বিষয়ে একই ধরনে সতর্কতা জারি করেছেন এবং জনগণকে ভূতলঘরে আশ্রয় নিতে বলেছেন।
এদিকে সোমবার রাতে নিজের নিয়মিত ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রাশিয়ার ভূখণ্ডে আক্রমণের কথা আবারও স্বীকার করে বলেন, ‘পুতিন এতটাই যুদ্ধ করতে চাইলে রাশিয়াকে অবশ্যই শান্তি স্থাপন করতে বাধ্য করতে হবে।’
‘রাশিয়া অন্যদের জন্য যুদ্ধ নিয়ে এসেছে এবং এখন এটা বাড়িতেই ফিরছে। ইউক্রেন সব সময় শুধু শান্তি চেয়েছে এবং আমরা অবশ্যই শান্তি নিশ্চিত করব।’
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, হাজারো সেনা এই অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। রাশিয়ার সীমান্তরক্ষীরা প্রাথমিকভাবে এটিকে যতটা ছোট অনুপ্রবেশ বলেছিল এই অভিযান তার থেকে অনেক বড়।
একজন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, তাদের লক্ষ্য ‘সর্বোচ্চ ক্ষতিসাধন এবং রাশিয়ার পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলা’।
গতকাল সোমবার কিয়েভে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম। তিনি রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের এই আক্রমণকে ‘অসাধারণ’ এবং ‘সাহসী’ বলেছেন। তিনি বাইডেন প্রশাসনকে ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় অস্ত্র দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন।
এদিকে ইউক্রেনের সেনারা কীভাবে কুরস্ক অঞ্চলে প্রবেশ করতে সক্ষম হলো, তা নিয়ে রাশিয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলেছেন রাশিয়াপন্থী ব্লগার ইউরি পোডোলিয়াক।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনী এর কড়া জবাব দিতে ‘খুব বেশি সময় নেবে না’।
রাশিয়ার মিত্র বেলারুশও এই পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থা গ্রহণ করেছে। বলেছে, ইউক্রেনের ড্রোন তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে। তারা নিজেদের সীমান্তে সেনা বাড়াচ্ছে।