পোল্যান্ডে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের বিদায় হলেও স্বস্তি কতটুকু
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা৷ কিন্তু গত সোমবার রাতে পোল্যান্ডে রাজনৈতিক পালাবদলের ফলে ইউরোপের বড় অংশ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল৷ উগ্র জাতীয়তাবাদী পিস পার্টির আট বছরের শাসনকাল শেষ হলো।
একের পর এক বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়ে পিস পার্টি পোল্যান্ডের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও আইনের শাসন দুর্বল করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছিল। ফলে কোটি কোটি ইউরো অঙ্কের ইইউ অনুদান এতকাল আটকে ছিল।
গত ১৫ অক্টোবরের সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েও বিতর্কের পথ ছাড়েনি পিস পার্টি। সেই দলেরই পুরোনো সদস্য ও বর্তমানে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আনজেই দুদা নির্বাচনে জয় সত্ত্বেও বিরোধী জোটকে প্রথমে সরকার গড়ার সুযোগ দেননি। তিনি দ্রুত রাজনৈতিক পালাবদলের বদলে প্রহসনের পথ বেছে নিয়ে পিস পার্টির প্রধানমন্ত্রী মাটেউশ মোরাভিয়েৎস্কিকে আবার সরকার গড়তে বলেন।
সংবিধান অনুযায়ী সরকার গঠনের দুই সপ্তাহের মধ্যে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে গিয়ে গত সোমবার শেষ পর্যন্ত নতিস্বীকার করেন মোরাভিয়েৎস্কি৷ সেদিনই বিরোধী জোটের নেতা ও ইইউ সরকার পরিষদের সাবেক প্রধান ডোনাল্ড টুস্ক সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন।
পার্লামেন্টে সমর্থনের পর টুস্ক ‘নতুন ও সুন্দর’ পোল্যান্ডের প্রতি আস্থা রাখার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন। তিনি ‘ঐতিহাসিক’ পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেন। তবে আস্থা ভোটে টুস্কের জোটের জয়ের পর পিস পার্টির নেতা ইয়ারোস্লাভ কাচিনস্কি তাঁকে ‘জার্মান এজেন্ট’ বলে তাঁর কড়া সমালোচনা করেন।
নির্বাচিত জোটের প্রতি সমর্থন জানাতে পোল্যান্ডে গণতান্ত্রিকভাবে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও নোবেলজয়ী নেতা লেখ ভাউয়েসা পার্লামেন্টে উপস্থিত ছিলেন।
পোল্যান্ডে রাজনৈতিক পরিবর্তনের বাতাস বইলেও পিস পার্টির আমলে নেওয়া বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলো যে দ্রুত প্রত্যাহার করা সহজ হবে না, গত সোমবারই তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। দেশের সাংবিধানিক ট্রাইব্যুনালের এক রায় অনুযায়ী, নতুন সরকার সংস্কার আনতে আইন অনুমোদন করলে সেই সিদ্ধান্ত হবে অসাংবিধানিক।
টুস্কের মতো ইউরোপপন্থী নেতা পোল্যান্ডের হাল ধরলেও আইনি সংস্কার না করলে ইইউ তহবিলের নাগাল পাওয়া যাবে না। পিস পার্টির শাসনামলে নিযুক্ত ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা এবং সেই শিবিরেরই প্রেসিডেন্ট দুদা ভেটো শক্তি প্রয়োগ করে টুস্কের উদ্যোগ বানচাল করতে পারেন।
এমন কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও ইউরোপীয় নেতারা আন্তরিকভাবে ডোনাল্ড টুস্ককে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লাইয়েন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও আছেন।