রীতি মেনেই কি চার্লসের রাজ্যাভিষেকে যাচ্ছেন না বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্কে একসময় তিক্ততা ছিল। পরে তা বন্ধুত্বে গড়ায়। দেশ দুটি নিজেদের ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব এগিয়ে নিচ্ছে। এ সম্পর্ক ছাপিয়ে একটি প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট কেন ব্রিটিশ রাজা বা রানির রাজ্যাভিষেকে অংশ নেননি।
আগামী শনিবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে অনুষ্ঠিত হবে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেকের রাজকীয় আয়োজন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে তাঁর ছেলে চার্লস যুক্তরাজ্যের রাজা হয়েছেন। রাজা চার্লসের অভিষেকে অনেক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা অংশ নেবেন। তবে এ আয়োজনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থাকছেন না।
হোয়াইট হাউসের সংশ্লিষ্ট সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, রাজা চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে নিয়ম মেনে জো বাইডেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পরে চার্লসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বাইডেন। ফোনালাপে ব্রিটিশ রাজাকে বাইডেন জানিয়েছেন, রাজকীয় এ আয়োজনে তিনি থাকতে পারছেন না। তবে মার্কিন ফার্স্টলেডি জিল বাইডেন অংশ নেবেন।
ফোনালাপে বাইডেন আশা প্রকাশ করেছেন, অভিষেক অনুষ্ঠানে যেতে না পারলেও শিগগিরই রাজা চার্লসের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে। তবে তিনি কেন চার্লসের রাজ্যাভিষেকে অংশ নিতে লন্ডনে যাচ্ছেন না, সেটা জানাননি।
ইতিহাস যা বলে
ইতিহাসবিদেরা বলছেন, চার্লসের রাজ্যাভিষেকে জো বাইডেনের যোগ না দেওয়াটা যতটা না রাজনৈতিক, তার চেয়ে বেশি ঐতিহাসিক। কেননা, ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো ব্রিটিশ রাজা–রানির রাজ্যাভিষেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অংশ নেওয়ার নজির নেই।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক ও আধুনিক ব্রিটেনবিষয়ক বিশ্লেষক লরা বিয়ার্স বলেন, ‘চার্লসের রাজ্যাভিষেকে তিনি (বাইডেন) যাচ্ছেন না। কারণ, এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট যাননি।’
রানি ভিক্টোরিয়ার রাজত্ব শুরুর আগে ১৮১২ সালে ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের উত্তেজনাও ছিল। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। ১৮৩৭ সালে ভিক্টোরিয়া যখন সিংহাসনে বসেন, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন মার্টিন ভ্যান বুরেন। তিনি ভিক্টোরিয়ার অভিষেক অনুষ্ঠানে যাননি।
এ বিষয়ে লরা বিয়ার্স বলেন, ‘ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ব্রিটিশ রানির অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন, সেটা বাস্তবসম্মত ছিল না। পরে সেটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়।’
ভিক্টোরিয়ার পর থেকে দ্বিতীয় এলিজাবেথের আগপর্যন্ত একে একে ব্রিটিশ সিংহাসনে বসেন রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড (১৯০১), পঞ্চম জর্জ (১৯১০), অষ্টম এডওয়ার্ড (১৯৩৬), ষষ্ঠ জর্জ (১৯৩৬)। তাঁদের কারও অভিষেকেই তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্টদের দেখা যায়নি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সম্পর্কে পালাবদল
যুক্তরাষ্ট্র–যুক্তরাজ্যের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে পালাবদল ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। জার্মানি–ইতালি–জাপানের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে যুদ্ধ করে দেশ দুটি। বিশ্বযুদ্ধে জয়ের পর থেকে দুই দেশের বন্ধুত্বে নতুন যুগের সূচনা হয়। ওই সময় (১৯৫২ সাল) রাজ্যাভিষেক হয় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের।
তখন ওয়াশিংটনে ক্ষমতায় ছিলেন আইজেনহাওয়ার। কিন্তু রীতি–ঐতিহ্য মেনে বন্ধুরাষ্ট্রের রানির রাজ্যাভিষেকে যোগ দেননি আইজেনহাওয়ার। রাজকীয় সেই অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন তিনি। ঐতিহাসিক স্যাম এডওয়ার্ড বলেন, ওই সময় কোরিয়া যুদ্ধ চলছিল। যুদ্ধের কাজে ব্যস্ততার কারণে আইজেনহাওয়ার রানি এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।
তবে এতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এর দুই বছর পর আইজেনহাওয়ার তাঁর পরিবার নিয়ে বালমোরাল প্রাসাদে রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
টানা ৭০ বছরের বেশি সময় সিংহাসনে ছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একে একে ১৪ জন প্রেসিডেন্ট পেয়েছে। সবার সঙ্গে রানির দেখা হয়েছে। নিজের রাজত্বকালে চারবার রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
এবার রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেকে আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও লন্ডনে যাচ্ছেন না বাইডেন। স্ত্রী জিল বাইডেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছেন। বিশ্লেষকদের মতে, বন্ধুরাষ্ট্রের রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানে বাইডেনের যোগ না দেওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখছে অতীতের রীতি–ঐতিহ্য।