যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে ভোট শেষ, ট্রাসের জয়ের সম্ভাবনা
যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচন এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উত্তরসূরি বেছে নিতে এক মাস ধরে চলা ভোটাভুটি শেষ হয়েছে। আগামী সোমবার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, লিজ ট্রাস নির্বাচনে জয় পাবেন এবং পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হবেন। খবর আল–জাজিরার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাকের মধ্য থেকে একজনকে বরিস জনসনের উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নিতে গত ৪ আগস্ট থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা অনলাইন ও ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন। প্রায় এক মাস ধরে চলা ভোটাভুটি শেষ হয় গতকাল শুক্রবার বিকেল পাঁচটায়। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এর এক দিন পরই ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন জনসন।
কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু স্টিফেনসন দুই প্রার্থীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘আমি জানি, আমাদের দলটি একজন নতুন নেতাকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং দেশের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে, তা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আছে।’
কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি অবস্থার মধ্যে আছে যুক্তরাজ্য। চলতি বছরের শেষের দিকে দেশটিতে মন্দা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে। লিজ ট্রাস তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় আশ্বাস দিয়েছেন, নির্বাচিত হলে করের হার কমাবেন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবেন।
গতকাল ভোটাভুটি শেষ হওয়ার পর এক বিবৃতিতে লিজ ট্রাস বলেন, ‘আমার একটি দৃঢ় পরিকল্পনা আছে, যা আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। এতে উচ্চ মজুরি পাওয়া যাবে, পরিবারগুলোর জন্য আরও বেশি করে নিরাপত্তা এবং বিশ্বমানের জনসেবা নিশ্চিত করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হই, তাহলে কখনোই কাউকে আমাদের ছোট করে কথা বলতে দেব না। আমাদের এ দেশের সাফল্য নিশ্চিত করতে আমি আমার সাধ্যমতো সবকিছু করব।’
৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাক তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী লিজ ট্রাসের পরিকল্পনাকে ‘বেপরোয়া’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের পরিকল্পনা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেবে এবং আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ও বাজারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
ঋষি সুনাকের দাবি, দেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী হিসেবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁর যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, তা দিয়ে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তিনিই সবচেয়ে বেশি কাজ করতে পারবেন।
গতকাল সুনাক বলেন, ‘সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। তবে প্রচুর সুযোগ-সুবিধাও পাওয়া যাবে। চ্যালেঞ্জিং সময় কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, তা আমি জানি। অর্থমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সে কাজ আমি করেছি এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি আবারও তা করব।’
একের পর এক বিতর্ক ও নিজ দলে মন্ত্রীদের বিদ্রোহের মুখে গত জুলাইয়ে বরিস জনসন পদত্যাগের ঘোষণা দেন। দলের সদস্যরা নতুন একজন নেতা নির্বাচিত করলেই তিনি পদত্যাগ করবেন। বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হতে ১০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সেখান থেকে চূড়ান্তভাবে টিকে যান ঋষি সুনাক ও লিজ ট্রাস। দলের সদস্যদের ভোটে তাঁদের দুজনের মধ্যে একজনকে নির্বাচিত করতে আগস্টের শুরুর দিকে শুরু হয় চূড়ান্ত ভোটাভুটি। কনজারভেটিভ পার্টির দুই লাখ সদস্য ভোটাভুটিতে অংশ নেন। দলীয় নেতৃত্বের এ লড়াই নিয়ে করা জনমত জরিপে শুরু থেকেই এগিয়ে আছেন ৪৭ বছর বয়সী লিজ ট্রাস।