ভাগনারের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে রাশিয়া
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভাড়াটে বাহিনী ভাগনারের মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলমান টানাপোড়েনের মধ্যে এবার সরাসরি দেশটি ভাগনারের নিয়ন্ত্রণ নিতে চলেছে।
গতকাল শনিবার দেশটির উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী নিকোলাই প্যানকভ বলেছেন, ‘স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীটিকে’ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি স্বাক্ষর করতে বলা হবে।
এ ঘোষণায় কোন বাহিনীকে বোঝানো হয়েছে, তা স্পষ্ট করা না হলেও ভাগনারকে লক্ষ্য করেই এটা বলা হয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আজ রোববার এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে ভাগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন কড়া ভাষায় বলেছেন, তাঁর বাহিনী চুক্তিগুলো বয়কট করবে।
ইউক্রেন যুদ্ধে ভাগনার বাহিনী রাশিয়ার হয়ে লড়াই করছে। কিন্তু ইয়েভজেনি কয়েক মাস ধরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সামরিক প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি বারবার এই দুজনের অযোগ্যতা ও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ভাগনারকে কম অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ করেছেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ার ইয়েভজেনি বলেন, ‘শোইগুর সঙ্গে ভাগনার কোনো চুক্তি সই করবে না। শোইগু ঠিকভাবে সামরিক বাহিনী চালাতে পারে না।’
ইয়েভজেনি তাঁর বাহিনীটি রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ভালোভাবে সমন্বয় করে কাজ করছে বলে জোর দিয়ে আসছিলেন। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করতে হলে তাতে বাহিনীর কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবারের ঘোষণায় স্পষ্ট করে ভাগনার বা অন্য কোনো আধাসামরিক বাহিনীর কথা বলা না হলেও রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলো মনে করছে , নতুন এই চুক্তি ইয়েভজেনি ও তাঁর বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে।
কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বাহিনীর ‘কার্যকারিতা বাড়াতে’ এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১ জুলাইয়ের মধ্যে এ চুক্তি সই হতে হবে।
সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহ ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। গত সপ্তাহে বাখমুতের কাছে ভাগনারের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগে যুদ্ধের সম্মুভভাগের দায়িত্বে থাকা সেনা কমান্ডার লে. কর্নেল রোমান ভেনেভিতিনকে অপহরণ করে ভাগনার বাহিনী। অবশ্য পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনা নিয়ে রাশিয়ান সামরিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে লেখালেখি করা ব্লাগাররা একটি ভিডিও শেয়ার করেন। সেখানে ওই সামরিক কর্মকর্তা বাহিনীটির বিরুদ্ধে অস্ত্র চুরির মাধ্যমে যুদ্ধে রুশ বাহিনীর সম্মুখসারিতে ‘নৈরাজ্য’ ছড়ানোর অভিযোগ আনেন। এমনকি তাঁরা সৈন্যদের বাহিনীটির সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অস্ত্র আদায়ের চেষ্টা করে।
তবে ইয়েভজেনি এমন দাবিকে ‘একেবারে বাজে কথা’ বলে মন্তব্য করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে তিনি উল্টো বলেন, তিনি তাঁর বাহিনীর সদস্যদের রাশিয়ার মাটিতে মোতায়েন করতে প্রস্তুত। এমনকি রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চলে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে প্রস্তুত।
গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, ইউক্রেন ভাগনারের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য লড়াই করছে এবং ভাড়াটে বাহিনীটি ক্রমশ বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় শক্তির হাতিয়ার হয়ে উঠছে।