কেট মিডলটনের ভিডিও কি সত্যি এআই দিয়ে তৈরি
নানা গুঞ্জনের মুখে গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটন ভিডিও বার্তা দিয়ে জানান, তাঁর ক্যানসারের চিকিৎসা চলছে। তবে এরপরও তাঁকে নিয়ে গুঞ্জন থামছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আসছে। এমনকি কেউ কেউ বলছেন, তিনি আসলে মারা গেছেন, তবে তা গোপন রাখা হয়েছে।
পেটের অস্ত্রোপচারের পর কয়েক মাস ধরে কেট মিডলটন জনসমক্ষে না আসায় তাঁকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলেছিল। তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে অনেক কথা বলছিলেন। এমনকি কেউ কেউ কঙ্কালের ইমোজি পোস্ট করে দাবি করেন, কেট মারা গেছেন, রাজপরিবার তাঁর মৃত্যুর কথা গোপন রেখেছে। আবার কেউ বলছিলেন, তিনি কোমায় আছেন।
এমন নানা গুঞ্জনের মধ্যে গত শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় ৪২ বছর বয়সী কেট জানান, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁর কেমোথেরাপি চলছে। ওই ভিডিও প্রকাশের পর বিশ্বজুড়ে অনেকে কেটের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। কেট আশা করছিলেন, এ ভিডিও বার্তার মধ্য দিয়ে ভিত্তিহীন এসব গুঞ্জনের অবসান হবে।
তবে এরপরও গুঞ্জন থামছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেটকে নিয়ে নানা ভিত্তিহীন তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে।
মার্কিন সাময়িকী দ্য আটলান্টিকে লেখক হেলেন লেউয়িস লিখেছেন, এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আদতে কেটকে হয়রানি করা হচ্ছে।
‘নিষ্ঠুর প্রতারক’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ও টিকটকের ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন পোস্টে দাবি করেছেন, কেটের ভিডিও বার্তাটি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা) দিয়ে তৈরি করা ভুয়া ভিডিও।
কেউ কেউ বলছেন, ভিডিওটিতে হেরফের আছে। এর ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা বা ঘাস কিছু নেই কেন, সে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। আর ভিত্তিহীন এ দাবিকে সমর্থন জানাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ ভিডিওটির ধীরগতির কিছু সংস্করণ পোস্ট করেছেন।
কেউ কেউ আবার কেটের মুখভঙ্গি নিয়েও গুঞ্জন তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, এর আগে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত ছবিতে কেটের মুখে টোল পড়তে দেখা গেলেও এ ভিডিওতে তা দেখা যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘দুঃখিত হাউস অব উইন্ডসর, কেট মিডলটন এবং তথাকথিত সংবাদমাধ্যম। আপনারা যা বিক্রি করছেন, তা আমি এখন কিনছি না। আসলে দুঃখিত নই। বাঘ এল, বাঘ এল বলে চিৎকার করা সে রাখাল বালকের গল্প আপনারা সবাই পড়েছেন, তাই নয় কি?’
ক্যানসার বিষয়েও অনেক ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে অনেকে মিথ্যা দাবি তুলেছেন যে রোগটি প্রাণঘাতী নয়। কেমোথেরাপিকে বিষের সঙ্গে তুলনা করছেন তাঁরা।
টিকাবিরোধীরাও থেমে নেই
টিকার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা মানুষের অনেকেও কেটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তত্ত্বে মেতেছেন। তাঁরা ভিত্তিহীনভাবে কেটের ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে ‘টারবো ক্যানসার’ মিথকে জুড়ে দিচ্ছেন। টারবো ক্যানসার মিথের প্রচারকারী মানুষদের দাবি, যাঁরা কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য টিকা নিয়েছেন, তাঁরা ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। যদিও বারবারই এ ভ্রান্ত ধারণাকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
কানাডার আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া তথ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ টিমোথি কলফিল্ড মনে করেন, টিকার বিরুদ্ধে যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তাকে সত্য বলে মেনে নেওয়ার মতো কোনো প্রমাণ নেই।
টিমোথি কলফিল্ড বলেন, ‘ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকেরা হলেন নিষ্ঠুর ধরনের প্রতারক। তাঁরা ভয় আর ভুয়া তথ্য বিপণন করছেন।’
‘সন্দেহের বীজ বপন’
ভুয়া ষড়যন্ত্র তত্ত্বের এমন বিস্তারের মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, ভুয়া তথ্যে ঠাসা ইন্টারনেট দুনিয়ায় সত্য তথ্য কতটা করুণ দশার মধ্যে আছে। ইন্টারনেটে ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ির কারণে বিভ্রান্ত হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রথাগত সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতি মানুষের অনাস্থা বাড়ছে।
গবেষকেরা বলছেন, অনলাইনে নির্বাচন, জলবায়ু, স্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর আলোচনায়ও এই একই ধরনের অবিশ্বাসের প্রভাব পড়ছে।
কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক মনস্তত্ত্ব–বিষয়ক অধ্যাপক কারেন ডগলাস এএফপিকে বলেন, লোকজন যা দেখছে এবং যা পড়ছে, তাতে ভরসা করে না। একবার যদি সন্দেহের বীজ বপন করা হয়ে যায়, তখন মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। তারা তখন ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
গত বছরের ডিসেম্বরে বড়দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন কেট। গত জানুয়ারিতে অস্ত্রোপচারের পর তিনি জনসমক্ষে আসা বন্ধ করে দেন। আর তখন থেকেই তাঁকে নিয়ে গুঞ্জনগুলো ছড়াতে থাকে।
কেটের স্বামী ও ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়াম ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে উইন্ডসর ক্যাসেলে তাঁর ধর্মপিতা গ্রিসের প্রয়াত রাজা দ্বিতীয় কনস্ট্যান্টাইনের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় এ গুঞ্জন আরও জোরালো হয়ে ওঠে।
মার্চের শুরুর দিকে সন্তানদের সঙ্গে কেটের একটি ছবি প্রকাশ করে কেনসিংটন প্রাসাদ। সে ছবি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কেট স্বীকার করেন, এটি সম্পাদিত। পরে তা নিয়ে ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকেরা উঠেপড়ে লাগেন।
এমনকি সম্প্রতি উইলিয়ামের সঙ্গে কেট একটি পার্শ্ববর্তী দোকানে গেছেন, এমন একটি ভিডিও প্রকাশের পরও গুঞ্জন থামেনি। ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকেরা বলতে থাকেন, ওই নারী কেট নন, তাঁর মতো দেখতে কেউ।
কী কারণে এমন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা। তাঁদের ধারণা, রাজপরিবারের গোপনীয়তা বজায় রাখার যে সংস্কৃতি এবং রাজপ্রাসাদের তালগোল পাকিয়ে যাওয়া জনসংযোগ কৌশল এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।