যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে সুনাক, পেছনে জনসন
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা লিজ ট্রাসের পদত্যাগের ঘোষণার পর তাঁর উত্তরসূরি কে হবেন, এ প্রশ্ন এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কেউ এ লড়াইয়ে নামার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। তবে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছে দুজনের নাম। তাঁরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও তাঁর সরকারের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এ দুজনের মধ্যে আবার এগিয়ে রয়েছেন ঋষি সুনাক। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ কথা তুলে ধরা হয়েছে।
যিনিই ওই পদের প্রার্থী হন না কেন, তাঁকে ৩৫৭ জন কনজারভেটিভ (টোরি) এমপির মধ্যে ন্যূনতম ১০০ জনের সমর্থন পেতে হবে। ২৮ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনপ্রক্রিয়া শেষ করার কথা রয়েছে।
সুনাকের নির্বাচনী প্রচারণা শিবিরের বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ঋষি সুনাক পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে প্রয়োজনীয় ১০০ এমপির সমর্থন নিশ্চিত করেছেন। কনজারভেটিভ দলের এমপি টোবিয়াস এলউড বলেছেন, ইতিমধ্যে ১০০ এমপির সমর্থন নিশ্চিত করেছেন সুনাক। অন্যদিকে জনসনের পক্ষে রয়েছেন ৪৪ জন এমপি।
জনসনের সরকারে অর্থমন্ত্রী ছিলেন ঋষি সুনাক। পরে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে শামিল হন। শেষ পর্যন্ত ট্রাসের কাছে হেরে যান। ট্রাসের কর পরিকল্পনা অর্থনীতি ধ্বংস করবে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন সুনাক। করোনা মহামারির সময় অর্থনীতি সচল রাখতে সচেষ্ট ছিলেন সুনাক। কিন্তু করসুবিধা নেওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে বিতর্ক উঠলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় তাঁর। ট্রাসের উত্তরসূরি হতে টোরি এমপি অ্যাঞ্জেলা রিচার্ডসন সুনাকের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গত ছয় সপ্তাহে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে সুনাকের যোগ্যতার বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
বরিস জনসনের পদত্যাগের পর গত সেপ্টেম্বরে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ট্রাস। করোনাকালে লকডাউনের মধ্যে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টির আয়োজন থেকে শুরু করে বহু বিতর্কের জেরে পদত্যাগ করেছিলেন জনসন। তবে এখনো পার্লামেন্ট ও দলে তাঁর অনেক মিত্র আছেন। তাঁরাই জনসনকে পদে ফেরাতে চাইছেন। দীর্ঘদিনের সমর্থক নাদিন ডরিসের যুক্তি, জনসনের আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য। কারণ, ২০১৯ সালের নির্বাচনে তিনি জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছিলেন।
এ দিকে জনসন–সুনাকের পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেনি মরডান্ট, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস, সদ্য পদত্যাগ করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানের মতো প্রভাবশালী প্রার্থীদের নাম।
পেনি মরডান্ট ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন। চলতি বছর তাঁকে হাউস অব কমন্সের নেতা ও প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দেন ট্রাস। সম্প্রতি ট্রাসের পক্ষ নিয়ে পার্লামেন্টে প্রশ্নের জবাব দিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি।
জনসন ও ট্রাস সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার শুরুর পর কিয়েভকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেওয়া বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। ওয়ালেস ব্রেক্সিটবিরোধী।
সম্প্রতি ট্রাস সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়েছেন সুয়েলা ব্রেভারম্যান। নথি হস্তান্তরের বিধি ভেঙে সুয়েলার সরে দাঁড়ানোটা ছিল ট্রাসের জন্য অস্বস্তিকর। তবে তাঁর পদত্যাগপত্রে অভিবাসন ইস্যুতে দ্বিমতের বিষয়টিও উঠে এসেছে। ট্রাসের ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়ায় এ ঘটনা। সাবেক আইনজীবী সুয়েলা অভিবাসনবিরোধী ও ব্রেক্সিট–সমর্থক। তিনি জনসন সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। চলতি মাসে তিনি বলেছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে রুয়ান্ডার উদ্দেশে যুক্তরাজ্য ছেড়ে যাওয়া একটি ফ্লাইট দেখতে পাওয়াটা তাঁর স্বপ্ন।
এদিকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টির এমপি কেমি বেডেনখের নামও।