ওয়াশিংটন পোস্টের নিবন্ধ
বাঁকবদলের মুহূর্তে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
বেশ কিছুদিন ধরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাফল্য পাচ্ছিল ইউক্রেনের বাহিনী। এ অবস্থায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এতটাই বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন যে ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকিও দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে ক্রিমিয়ার কার্চ সেতুতে বিস্ফোরণের জবাবে ইউক্রেনজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। এ হামলা যুদ্ধের ধরন ও গতি বদলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এ নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট–এ গত সোমবার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
এক মাসের বেশি সময় ধরে ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ আরও নিষ্ঠুর ও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। দুই পক্ষের উপর্যুপরি গোলার ব্যবহার ও সম্মুখসমর আগামী শীত পর্যন্ত চলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্মুখযুদ্ধ এখন বহুমাত্রিক রূপ নিয়েছে। আর এ পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও রাশিয়া—তিন দেশের কৌশলকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
রুশ বাহিনী গত সোমবার রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের ডজনখানেক শহরে ৮৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় কূটনৈতিক মিশন, বৈদ্যুতিক স্থাপনা, পার্ক থেকে শুরু করে অনেক বেসামরিক স্থাপনা ছিল। এ হামলা ইউক্রেন ও তার মিত্রদের জন্য বড় একটি ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ হামলার পর ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ হামলাকে ‘ক্ষেপণাস্ত্রের একের পর এক ঢেউ’ বলে মন্তব্য করেছেন, যা শিশুদের খেলার মাঠ, এমনকি পার্কেও আঘাত হেনেছে। প্রাণ গেছে অন্তত ১৯ জনের। আহতের সংখ্যা প্রায় ১০০। হামলায় ইউক্রেনের অনেক অঞ্চলে বিদ্যুৎ–পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিতস সাধারণ পরিষদের দেওয়া ভাষণে রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বাড়িতে ঘুমন্ত মানুষ কিংবা স্কুলগামী শিশুদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আবারও রাশিয়া প্রমাণ করেছে, এটি একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। দেশটিকে শক্তিশালী উপায়ে প্রতিহত করতে হবে।
সম্প্রতি যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের বাহিনী সাফল্য পেতে শুরু করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকিও দিয়েছেন। কিন্তু সোমবারের মস্কোর ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কয়েক সপ্তাহের যুদ্ধের ধরন ও গতি বদলে দিয়েছে। যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
পশ্চিমাদের ‘ধীরে চলো নীতি’
যুদ্ধের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইউক্রেনকে অস্ত্র–অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে। তবে এ প্রক্রিয়া এমনভাবে এগিয়ে নেওয়া হয়েছে, যাতে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের সরাসরি বিরোধ বা সংঘাত তৈরি না হয়। বিরোধ এড়ানোর এ কৌশলকে এখনো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে পশ্চিমারা। শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি–৭–এর নেতাদের গতকাল মঙ্গলবারের জরুরি ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এ কৌশল নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। এমনকি চলতি সপ্তাহে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকেও বিরোধ এড়ানোর কৌশল নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।
‘যুদ্ধের বাঁকবদলের মুহূর্তগুলো সাধারণত বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়’—এমনটাই মনে করছেন মার্কিন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা। তাই মার্কিন প্রশাসন দ্রুত পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে চায়।
তবে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যাওয়ায় বেশ উৎফুল্ল পুতিনের প্রশাসনের শীর্ষ নেতা ও কর্মকর্তারা। গত সোমবার ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির প্রধান ভিক্টর বন্দারেভ টেলিগ্রাম অ্যাপে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘রুশ বাহিনীর বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলমান যুদ্ধকে নতুন একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে।’
পুতিনের হুমকি–ধমকি
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার তাঁর সরকারের নিরাপত্তা কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি ইউক্রেনের ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমের’ প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেন। এর আগে গত শনিবার রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ক্রিমিয়ার সংযোগকারী কার্চ সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সেতু দিয়ে রুশ অধিকৃত দক্ষিণ ইউক্রেনে সেনা ও রসদ সরবরাহ করা হয়। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থাপনায় বিস্ফোরণের ঘটনার পেছনে ইউক্রেনের ‘সন্ত্রাসবাদ’কে দায়ী করেছে মস্কো।
গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে ইউক্রেনের বাহিনী দেশটির উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় রুশ অধিকৃত এক হাজার বর্গমাইলের বেশি ভূমি পুনরুদ্ধার করে। দক্ষিণাঞ্চলেও ইউক্রেনের বাহিনী বেশ কিছু সাফল্য পায়। এরপর ক্রিমিয়ার সেতুতে এ বিস্ফোরণের ঘটনাকে যুদ্ধে কিয়েভের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বিবেচনা করা হচ্ছিল। কিন্তু দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে ভূমিকা রেখেছে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর তুলনামূলক দুর্বল সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহারের বেশ কিছু খবর প্রকাশিত হয়। বলা হয়, যুদ্ধে রুশ সেনাদের মনোবল খুব একটা জোরালো নয়। তাই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সহজেই পিছু হটেন তাঁরা। এমনকি সামরিক সরঞ্জাম, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিহত সহযোদ্ধার মরদেহ ফেলে রেখে এসেছেন রুশ সেনারা। এ জন্য নিজ দেশেও বেশ সমালোচিত হতে হয়েছে রুশ বাহিনীকে। রাশিয়া সরকারের অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও এমন রণকৌশলের সমালোচনা করেছেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড়সংখ্যক সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। এর অংশ হিসেবে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তিন লাখের বেশি বেসামরিক ব্যক্তিকে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে পাঠানো হবে। তবে পুতিনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে রাশিয়ায় বিক্ষোভ হয়েছে। হাজার হাজার রুশ নাগরিক দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়েছেন।
গত ২১ সেপ্টেম্বর পুতিন এক ভাষণে ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘সব বিকল্প আমাদের হাতে রয়েছে। আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, যখন আমাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা হুমকিতে পড়বে, তখন রুশ নাগরিকদের রক্ষায় যেকোনো উপায় অবলম্বনের অধিকার আমাদের আছে। এবং এটা কোনো ধাপ্পা নয়।’ গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অধিভুক্ত করার কয়েক দিন আগে পুতিন এমন হুমকি দেন।
বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, একদিকে পুতিনের সেনা মোতায়েনের ঘোষণা, অন্যদিকে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি—এ দুটি বিষয় দুটি ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রথমত, পুতিন জানেন তিনি কতটা খারাপ কাজ করছেন...। দ্বিতীয়ত, তিনি আলোচনার কিংবা সমাপ্তির (যুদ্ধের) ধারেকাছেও নেই। যদিও এ বাস্তবতা কাউকেই স্বস্তি দেবে না।
পরিণতি ভালো হবে না
রোজ গোতেমোয়েলার ন্যাটোর উপমহাসচিব ছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। পুতিনের হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার একটি ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে। এর মধ্য দিয়ে পুতিনের নীতির চূড়ান্ত ব্যর্থতা সবার সামনে প্রকাশিত হয়ে পড়বে। অনেকেই ভাবছেন, এ হুমকির ফলে সবাই ভীত হয়ে পড়বে। ইউক্রেনকে শান্তির পথে এগিয়ে যেতে অনেকে জোরাজুরি করবে। কিন্তু আমি এমন কিছুর সম্ভাবনা দেখছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে তাঁর এ হুমকি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।’
ইউক্রেনের ভূখণ্ডে গত সোমবার ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্য দিয়ে পুতিন একটি ঐক্যবদ্ধ রণকৌশল ও সুসংহত নেতৃত্বের চিত্র সবার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন। রুশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে পুতিন বলেছেন, এ হামলা তাঁর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে ও পরিকল্পনায় করা হয়েছে।
বিশেষ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন পুতিন। যদিও বেশ কিছুদিন থেকে শোইগু প্রকাশ্যে আসছেন না। তাই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল, যুদ্ধের কৌশল নিয়ে পুতিনের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়েছেন শোইগু। এর শাস্তি হিসেবে তাঁকে পদচ্যুত করা হয়েছে। এমন গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে শোইগুর প্রশংসা করেন পুতিন।
ইউক্রেন আরও অস্ত্র চায়
কিছুদিন ধরে ইউক্রেন পশ্চিমা মিত্রদের কাছে অস্ত্রসহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আসছিল। অস্ত্রের চালান দ্রুত পাঠানোর তাগাদা দিচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে পশ্চিমাদের কাছে সম্মুখযুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ট্যাংক চেয়েছে কিয়েভ। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কৌশলগত কারণে কিয়েভের হাতে ট্যাংক তুলে দিতে দ্বিধায় ভুগছে। এরপরও রুশ হামলা ঠেকাতে পশ্চিমাদের কাছে এখন জরুরি ভিত্তিতে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চেয়েছে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, তাঁদের সামরিক কমান্ডাররা যে তালিকা দিয়েছেন, তাতে ভূমি থেকে নিক্ষেপণযোগ্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, এমআইএম–২৩ হাওক ক্ষেপণাস্ত্র, আক্রমণ পরিচালনাকারী ড্রোন এবং এনএএসএএমএস (ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাওয়া হয়েছে।
গত সোমবার হামলার পর ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ও অস্ত্র সরবরাহের আবেদন যুক্তরাষ্ট্রে অনেকের কাছে (বিশেষত জ্যেষ্ঠ ডেমোক্র্যাটদের কাছে) বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। তাঁরা চাইছেন ইউক্রেনকে আরও দ্রুত অস্ত্রসহায়তা দিতে কার্যকর উদ্যোগ নিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এ বিষয়ে মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রবার্ট মেনেনদেজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি কিয়েভসহ ইউক্রেনজুড়ে বেসামরিক স্থাপনার ওপর রাশিয়ার নিকৃষ্ট হামলায় আতঙ্কিত। আমি অঙ্গীকার করছি, ইউক্রেনের জনগণকে রক্ষা ও রাশিয়ার প্রাণঘাতী যুদ্ধযানগুলোকে প্রতিহত করতে আমাদের পক্ষ থেকে যা করা প্রয়োজন, তার সবই করা হবে।’
শুধু ডেমোক্র্যাট নয়, বিরোধী রিপাবলিকানদের অনেকে একই সুরে কথা বলছেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন ও দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রিপাবলিকান নেতা এলিসা স্লোটকিন টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘এ ধরনের আক্রমণ (ইউক্রেনে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা) প্রতিহত করতে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনকে দ্রুত এ ব্যবস্থা দেওয়া যেতে পারে। আমি আশা করি, আমাদের ইউরোপীয় মিত্ররাও ইউক্রেনের চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা দিতে এগিয়ে আসবে।’
দীর্ঘসূত্রতা রোধের আহ্বান
মার্কিন প্রশাসনের অনেকের আশা, ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা রোধে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেবে। এ বিষয়ে প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘তবে কিছু প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। ইউক্রেন যেসব অস্ত্র চায়, সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে আমাদের কাছে আছে কি না? এসব অস্ত্র পরিচালনায় ইউক্রেনের বাহিনী সক্ষম কি না? যদি না হয়, তাহলে আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা কী? আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দেব কি না? দিলে কীভাবে দেব?’ তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রশ্নের উত্তর জানা খুবই জরুরি।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মার্কিন প্রশাসনের কয়েকটি বিভাগ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর ও সুপারিশ জানতে চায়। তবে সহায়তার সিদ্ধান্ত যদি নিতেই হয়, তাহলে সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন সরকারি কর্মকর্তাদের কেউ কেউ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গ্রীষ্মের শুরুতে বাইডেন ইউক্রেনকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দেওয়ার ঘোষণা দেন। পরবর্তী সময়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, শরতে এসে দুটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইউক্রেনকে দেওয়া হয়েছে। এর একটি কার্যকর করতে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এটি পরিচালনা করতে ইউক্রেনের সেনাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গত আগস্টের শেষভাগে পেন্টাগন ঘোষণা দেয়, ইউক্রেনকে আরও ছয়টি এনএএসএএমএস দেওয়া হবে। তবে এগুলো তৈরি করতে বছরখানেক সময় লাগতে পারে।
বাইডেন প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি বলতে পারি, ইউক্রেন যুদ্ধে একটি সম্ভাব্য পরিবর্তনের বিন্দুতে অবস্থান করছি আমরা। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন বেশ ভালো করেছে, আগ্রাসী আচরণ করেছে। পুতিন নিজ দেশের ভেতরে ও বাইরে যুদ্ধের উত্তাপ বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছেন।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে বাঁকবদলের নানা পরিবর্তন আমাদের (মার্কিন প্রশাসনের) সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়াকে আরও বেশি কৌশলী করে তুলবে।’
কারেন দেইয়ং, সহযোগী সম্পাদক, ওয়াশিংটন পোস্ট
অনুবাদ করেছেন অনিন্দ্য সাইমুম ইমন