আরও আগে রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণ করা উচিত ছিল: পুতিন
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, আরও আগে রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণ করা উচিত ছিল এবং যুদ্ধের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত ছিল। বৃহস্পতিবার বছর শেষের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ইউক্রেনের কাছ থেকে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে রুশ সেনারা। এর পর থেকে রুশপন্থী শক্তি পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। এর প্রায় আট বছর পর পুতিন কিয়েভ দখলের চেষ্টা করেন।
চার ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে পুতিন সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত নেতা বাশার আল-আসাদকে নিয়েও কথা বলেন। এ ছাড়া তিনি রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আরও আগ্রাসী মন্তব্যের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা বলেন।
‘রেজাল্টস অব দ্য ইয়ার উইথ ভ্লাদিমির পুতিন’ নামের এ অনুষ্ঠান বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রধান রাষ্ট্রীয় চ্যানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। পুতিন রুশ ফেডারেশনের মানচিত্রসহ একটি বড় নীল পর্দার সামনে হাজির হন, যাতে ইউক্রেনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ভূখণ্ডও যুক্ত করা ছিল।
পুতিন সংবাদ সম্মেলনে দেশি–বিদেশি সাংবাদিক ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির কাছ থেকে আসা প্রশ্নের উত্তর দেন। তবে এসব প্রশ্ন নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে করা হয়।
বিবিসি রাশিয়ার সম্পাদক স্টিভেশন রোজেনবার্গ পুতিনকে প্রশ্ন করেন, ২৫ বছর আগে পুতিনের পূর্বসূরি বরিস ইয়েলৎসিন যে অবস্থায় রাশিয়াকে রেখে গিয়েছিলেন, তার চেয়ে রাশিয়া এখন আরও ভালো অবস্থায় আছে বলে তিনি মনে করেন কি না? পুতিন এর জবাবে বলেন, রাশিয়া তার সার্বভৌমত্ব ফিরে পেয়েছে।
পুতিন বলেন, এর আগে রাশিয়ার সঙ্গে যা কিছু ঘটছিল, আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব সম্পূর্ণ খোয়াতে বসেছিলাম।
সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের সরকারের পতন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পুতিন বলেন, এটা ক্রেমলিনের জন্য কোনো পরাজয় নয়। রাশিয়া বাশারের সরকারকে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। পুতিন সিরিয়ায় রাশিয়ার পরাজয়ের কথা স্বীকার না করলেও সেখানকার পরিস্থিতি জটিল বলে মেনে নিয়েছেন। পুতিন বলেন, সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত নেতার সঙ্গে তিনি এখনো কথা বলেননি। বাশার বিদ্রোহীদের দামেস্ক অভিযানের মুখে সিরিয়া থেকে পালিয়ে বর্তমানে মস্কোয় আশ্রয় নিয়েছেন। পুতিন বলেন, তিনি শিগগিরই বাশারের সঙ্গে কথা বলবেন।
পুতিন আরও বলেন, তিনি সিরিয়ার নতুন শাসকদের সঙ্গে সেখানে দুটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি রাখার বিষয়ে আলোচনা করছেন। মস্কো ওই ঘাঁটি দুটি মানবিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করবে বলেও জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে পুতিন বলেন, চার বছর ধরে তাঁরা কথা বলেননি। তবে ট্রাম্প চাইলে তিনি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান।
ট্রাম্পের তুলনায় পুতিন দুর্বল অবস্থানে আছেন, এমন তুলনা প্রসঙ্গে পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহিত্যিক মার্ক টোয়েনের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘আমার মৃত্যুর গুজব অনেক অতিরঞ্জিত।’ তাঁর এ কথায় সম্মেলনকক্ষে হাসি ছড়িয়ে পড়ে।
চীন প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের প্রতিবেশীর সম্পর্ক স্মরণকালের সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। দুই দেশ বিশ্বমঞ্চে বিভিন্ন কাজের সমন্বয় করছে। পুতিন বলেন, ‘গত এক দশকে আমাদের সম্পর্কের স্তর এবং গুণমান এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা ইতিহাসজুড়ে কখনো বিদ্যমান ছিল না।’
সংবাদ সম্মেলনের বড় অংশজুড়ে ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গ। সেখানে পুতিন বলেন, যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে তিনি সমঝোতার জন্য প্রস্তুত। তবে কী ধরনের আপস বা সমঝোতা হতে পারে, তা স্পষ্ট নয়।
প্রতিদিনই ইউক্রেনে রুশ সেনারা এগিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন পুতিন। এ সময় নিজ দেশের সেনাদের ‘নায়ক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একপর্যায়ে পুতিন তাঁর পেছনে দুটি পতাকা ধরা হয়। তিনি বলেন, এই পতাকা কুরস্কে যুদ্ধরত সেনাদের স্বাক্ষর করা। তিনি বলেন, এসব সেনা তাঁদের মাতৃভূমির জন্য লড়াই করছেন।
ইউক্রেনে নিয়ন্ত্রণে নেওয়া বিভিন্ন এলাকায় রাশিয়ার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে কথা বলেন পুতিন। তিনি বলেন, লুহানস্ক অঞ্চলে ২০১৪ সালে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর রাস্তাঘাট অনেক উন্নত হয়েছে।
রাশিয়া গত নভেম্বরে পারমাণবিক নীতিমালার যে পরিবর্তন এনেছে, তা পশ্চিমাদের কোনো বার্তা দিয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, এর জবাব পশ্চিমাদের কাছে চাইতে হবে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো পারমাণবিক শক্তির সমর্থন পাওয়া যেকোনো দেশের ওপর রাশিয়া চাইলে পারমাণবিক আক্রমণ চালাতে পারবে।
পুতিন রাশিয়ার নতুন মধ্যবর্তী পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ওরেশনিকের সক্ষমতার ওপরও জোর দিয়েছেন, যেটি নভেম্বরে ইউক্রেনে হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল।