দূরপাল্লার অস্ত্র চায় ইউক্রেন

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রুশ বাহিনীকে হটাতে দূরপাল্লার অস্ত্র পাওয়ার জন্য তৎপরতা বাড়িয়েছে ইউক্রেন। এ লক্ষ্যে একের পর এক মিত্রদেশ সফর করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গত দুই দিনে বুলগেরিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র সফর করেছেন জেলেনস্কি। গতকাল শুক্রবার চেক প্রজাতন্ত্র থেকে তুরস্কে পৌঁছেছেন তিনি। এসব দেশ সফরে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি দূরপাল্লার অস্ত্র পাওয়া নিয়ে আলোচনা করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।

দূরপাল্লার অস্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালার সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, দূরপাল্লার অস্ত্র ছাড়া শুধু হামলা চালানোই নয়, বরং সত্য কথা বলতে আত্মরক্ষামূলক অভিযান পরিচালনাও কঠিন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে, এই উপযুক্ত অস্ত্রের বিষয়ে আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলছি। প্রথমত এবং সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দূরপাল্লার অস্ত্র নিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন বিষয়টি তাদের ওপরই নির্ভর করছে।’

এ সময় চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী পেত্র বলেন, তাঁর দেশ ইউক্রেনকে কমব্যাট হেলিকপ্টার (হামলায় ব্যবহারের উপযুক্ত) সরবরাহ করবে। ইউক্রেনের বৈমানিকদের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার বুলগেরিয়া থেকে চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে পৌঁছে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় দ্রুত ফল পাওয়া যাচ্ছে না, তবে কিয়েভের সেনারা অগ্রসর হচ্ছেন।

এর আগে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র উৎপাদনকারী দেশ বুলগেরিয়া সফরেও ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে আলোচনা করেন জেলেনস্কি।

অস্ত্র উৎপাদন বাড়াচ্ছে ইইউ

ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ জোরদার এবং ফাঁকা হওয়া অস্ত্রের মজুত পূর্ণ করতে অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনার বিষয়ে একমত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। কামানের গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনে ‘অ্যাক্ট ইন সাপোর্ট অ্যামুনিশন প্রোডাকশন (এএসএপি)’–এর অধীনে ৫০ কোটি ইউরো ব্যয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

পালাক্রমে ইইউর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে স্পেন। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারগারিতা রোবলেস বলেন, এটা ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন অবিচল রাখার আরেকটি প্রমাণ।

লিভ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৭

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দুই বাহিনীর লড়াইয়ের মধ্যে দেশটির অন্যান্য শহরেও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লিভে একটি আবাসিক ভবনে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। হামলায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৬ জন। ধ্বংসস্তূপ থেকে সাতজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভবনটির ছাদ ও মেঝেগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। শহরটির মেয়র আন্দ্রি সাদোভি বলেছেন, এই যুদ্ধে বেসামরিক স্থাপনায় এটিই সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা।

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের একটি ভিডিও অনলাইনে পোস্ট করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, অবশ্যই এই হামলার জবাব দেওয়া হবে।

জেলেনস্কির তুরস্ক সফর

ইস্তাম্বুলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে জেলেনস্কির। এই বৈঠকে কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো এবং রাশিয়ার সঙ্গে বন্দী বিনিময় নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে তুরস্কের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

এদিকে তুরস্কের একটি টেলিভিশনের বরাত দিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাস বলেছে, জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন এরদোয়ান। দুই নেতার এই সাক্ষাৎ সশরীর হতে পারে।