আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) আদেশে ইসরায়েলের অভিযান বন্ধের নির্দেশ না থাকায় তা দক্ষিণ আফ্রিকা ও ফিলিস্তিনিদের হতাশ করবে। যদিও আদেশে গণহত্যা রোধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে ইসরায়েলের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ চেয়ে দায়ের করা মামলায় আজ শুক্রবার প্রাথমিক আদেশ দেন আইসিজে। গাজার বাসিন্দাদের গণহত্যা থেকে সুরক্ষায় ‘ক্ষমতার আওতায় থাকা সব ব্যবস্থা গ্রহণে’ ইসরায়েলকে নির্দেশ দেন বিচারকেরা।
গাজায় ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগ এনে গত ডিসেম্বরে হেগে অবস্থিত আইসিজেতে মামলাটি করে দক্ষিণ আফ্রিকা। চলতি মাসের শুরুর দিকে দুই দিনের শুনানি হয়। আজ প্রাথমিক আদেশ দেন আদালত।
শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়, আদালত যেন জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেন।
বিবিসির কূটনৈতিক প্রতিবেদক পল অ্যাডামস বলেন, আদালত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধে সম্মত হননি। এটা এমন কিছু, যা দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদেরও একইভাবে হতাশ করবে।
কিন্তু আদালতের ১৭ বিচারকের মধ্যে ১৫ জনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেওয়া রায়ে বলা হয়েছে, অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে ইসরায়েলের উচিত ফিলিস্তিনিদের হত্যা, তাঁদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা কিংবা ফিলিস্তিনি নারীদের সন্তান জন্মদানে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা আরোপ এড়াতে দেশটির ক্ষমতার আওতার মধ্যে সবকিছু করা।
গাজায় গণহত্যার অভিযোগের বিষয়ে এটি চূড়ান্ত রায় নয়। মূল রায়ের জন্য কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মূল অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে আদালত গতকাল কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। গাজার ফিলিস্তিনিরা যাতে কিছু সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ পান, তা নিশ্চিত করতেই এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে কীভাবে তারা এই আদেশের প্রতিক্রিয়া জানাবে। আইসিজের আদেশ পালনের আইনি বাধ্যবাধকতা ইসরায়েলের রয়েছে। তবে ইসরায়েল সেটা না মানলে আদেশ বাস্তবায়নের কোনো ব্যবস্থা আইসিজের নেই। ইসরায়েল পুরো রায়ই না মানার পথে হাঁটতে পারে।
অবশ্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এখন দৃশ্যত দুই মাসের যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার দিকে জোর দিচ্ছে এবং গাজা উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানোর প্রচেষ্টাও চলছে। তাই ইসরায়েল যুক্তি দিতে পারে, তারা ইতিমধ্যে আদালতের আদেশ পালনের জন্য পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে।
আল-জাজিরার সাংবাদিক জেমস বেস বলেন, এটি একটি আগ্রহোদ্দীপক রায়। কারণ, বিচারকেরা দক্ষিণ আফ্রিকার বেশির ভাগ যুক্তির সঙ্গে একমত হয়েছেন। তাঁরা সম্মত হয়েছেন, এই মামলার বিচার করার এখতিয়ার তাঁদের রয়েছে, তাই তাঁরা বিচার করছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগের মধ্যে কিছু বিষয় অবশ্যই গণহত্যা সনদের সংজ্ঞার মধ্যে পড়েছে বলেও আদালত আদেশে উল্লেখ করেছেন।
তবে অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়টি অন্তর্বর্তী আদেশে না থাকাটা দক্ষিণ আফ্রিকাকে আশাহত করবে। যদিও কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ইসরায়েলকে অবশ্যই নিতে হবে। এক মাসের মধ্যে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত প্রতিবেদন নিয়ে ইসরায়েলকে আইসিজেতে হাজির হতে হবে।
আদেশে বলা হয়েছে, গণহত্যার মধ্যে পড়তে পারে এমন কর্মকাণ্ড ঠেকাতে ইসরায়েলকে তার ক্ষমতার মধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনি বিশেষজ্ঞদের এখন এর ওপর নজর দিতে হবে। কারণ, গণহত্যা সনদ অনুযায়ী অধিকার সুরক্ষিত গোষ্ঠীর আওতায় পড়ে এমন লোকজনের প্রাণহানি ঠেকানোর বিষয়টিও এর মধ্যে রয়েছে।