তিন দশক পর ইইউর নিষেধাজ্ঞার মুখে চীন
চীনের জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকজনকে গণহারে আটকে রাখা ও তাঁদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ পুরোনো। এ ইস্যুতে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার’ অভিযোগ তুলেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এবার উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে চীনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর মধ্য দিয়ে গত ৩০ বছরের বেশি সময় পর আবারও ইইউর নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে যাচ্ছে চীন।
ইইউ জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আজ সোমবার চীনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর লোকজনের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সম্পৃক্ত চারজন চীনা কর্মকর্তা ও একটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করছে ইইউ। তাঁদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। সম্পত্তির ব্যবহার ও হস্তান্তর স্থগিত করা হবে। যদিও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা চীনা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নাম এখনো প্রকাশ করেনি ইইউ।
ইইউর একজন কূটনীতিক জানান, সবশেষ ১৯৮৯ সালে চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ইইউ। ওই সময় তিয়েনআনমেন স্কয়ারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চীনা সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ। ৩০ বছরের বেশি সময় পর এবার জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর লোকজনের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে চীনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দিল জোটের সদস্যরা।
সম্প্রতি চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে ‘সংশোধনাগার শিবির’-এ উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের বেশ কিছু নথি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। দেশটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, উইঘুর নারীদের জোর করে বন্ধ্যা করে দিচ্ছে চীন। শিশুদের তাদের পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। বিবিসির অনুসন্ধানে বলা হয়, উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজনকে জোরপূর্বক কাজ করতে বাধ্য করার প্রমাণ মিলেছে। সেখানকার নারীদের পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ ও নির্যাতন করারও প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, জিনজিয়াংয়ের পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন ক্যাম্পে কমপক্ষে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটক রাখা হয়েছে। চীন এসব ক্যাম্পের কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এগুলো আসলে প্রশিক্ষণকেন্দ্র। উগ্রবাদী মানসিকতা প্রশমনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এসব অভিযোগের পর চীনের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হয় জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো।
নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্টে পাস হওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে যা করা হচ্ছে, তা ‘গণহত্যার’ শামিল। সংখ্যালঘু উইঘুর জনগোষ্ঠীর প্রতি চীন সরকারের আচরণকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যা দেয় কানাডার পার্লামেন্ট।
সমালোচনায় সোচ্চার রয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও উইঘুর মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রতি চীনের আচরণকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
তবে চীন বরাবর এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। চলতি মাসের শুরুতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, গণহত্যার অভিযোগ হাস্যকরভাবে অযৌক্তিক এবং ডাহা মিথ্যা। পশ্চিমা রাজনীতিবিদেরা জিনজিয়াংয়ে ঘটনায় মিথ্যা তথ্যের ওপর আস্থা রাখছেন।