টিকা কূটনীতিতে চীন

রয়টার্স প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাসের টিকাকে কূটনীতির একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে চীন। আজ রোববার সিএনএন অনলাইনে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়।

বিশ্লেষণে বলা হয়, চীন তার আফ্রিকান মিত্রদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে যে এই মহাদেশের জন্য করোনার টিকা সরবরাহ করা বেইজিংয়ের একটি অগ্রাধিকার।

টিকা আসার বেশ আগে থেকেই বিশ্বের ধনী দেশগুলো তার আগাম ক্রয়াদেশ দিতে থাকে। তখন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং প্রতিশ্রুতি দেন যে আফ্রিকার দেশগুলোকে টিকা দেওয়ার বিষয়টিকে তাঁর দেশ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

চীনা প্রেসিডেন্টর এই অঙ্গীকারের পর চীন থেকে আফ্রিকা মহাদেশে মাস্ক, করোনা পরীক্ষার কিট, চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রভৃতি সহায়তা হিসেবে সরবরাহ করতে দেখা যায়।

আফ্রিকার মিত্রদেশগুলো চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় তাদের ভোট রয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলোর এই ভোটাধিকার চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের পাশে রাখতে চায় বেইজিং। এখন তাদের পাশে রাখতে চীন টিকা কূটনীতির ব্যবহার করছে।

আগে আফ্রিকাকে নিজ দলে রাখতে প্রচুর ঋণ দিচ্ছিল চীন। কিন্তু এখন তাদের হাতে আছে টিকা। ফলে, তারা এই হাতিয়ারকে কাজে লাগাচ্ছে।

আফ্রিকাকে চীনা প্রেসিডেন্টের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার সক্ষমতা বেইজিংয়ের রয়েছে।

চীন ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবহারের জন্য সিনোফার্মার টিকার অনুমোদন দিয়েছে। আরও চারটি চীনা টিকা পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে রয়েছে।

চীনা টিকা সংরক্ষণের জন্য অতি শীতল তাপমাত্রার দরকার নেই। ফলে, উন্নয়নশীল দেশগুলোয় তা সরবরাহ ও পরিবহন সহজ হবে।

চীনে ইতিমধ্যে লাখো মানুষ টিকা নিয়েছেন। এ ছাড়া গত জুনে আফ্রিকায় চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের করোনার টিকার ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকায় চীনা টিকার ট্রায়াল চলছে। তবে চীনা টিকার কোনো ট্রায়ার এখন পর্যন্ত সাব-সাহারান আফ্রিকায় চালানো হয়নি।

আফ্রিকা মহাদেশের জন্য চীনা টিকার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র পলিসি ফেলো ডব্লিউ গুইদে মুর। তিনি বলেন, আফ্রিকায় টিকা দেওয়ার চীনা প্রতিশ্রুতি প্রকৃত অর্থেই ভুয়া। এ ক্ষেত্রে কোনো সময়সূচি নেই। আছে শুধু প্রতিশ্রুতি।

লাইবেরিয়ার সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমি আফ্রিকার এমন কোনো দেশ সম্পর্কে জানি না, যারা চীনা টিকার সরবরাহ পাচ্ছে।’

সম্প্রতি চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আফ্রিকা সফর করেন। তিনি তাঁর এই সফরে মহাদেশটির কোনো দেশকে করোনার টিকা দেওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি।

আফ্রিকায় টিকা দেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে সিএনএ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু তারা এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো জবাব দেয়নি।

করোনার টিকাকে রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর উপায় হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়ে যে অভিযোগ, তা নাকচ করছে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।

আফ্রিকা ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও করোনার টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে চীন।