চীনা বেলুনটির আকার তিনটি বাসের সমান: পেন্টাগন
যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকার আকাশসীমায় সন্দেহজনক চীনা বেলুন শনাক্ত হওয়ার ঘটনায় কয়েক দিন ধরে ওয়াশিংটন-বেইজিং উত্তেজনা বেড়েছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে দেখা দেওয়া বেলুনটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ধ্বংস করেছে ওয়াশিংটন।
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে বিশাল একটি বেলুন শনাক্ত করেছেন। একে চীনা নজরদারি বেলুন বলে উল্লেখ করেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে বেলুন শনাক্ত হওয়ার পর দিন গত শুক্রবার পেন্টাগনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বেলুনটির আকার তিনটি বাসের সমান। এতে সেন্সর ও নজরদারি যন্ত্রপাতি আছে। এটি দিক পরিবর্তন করতে পারে। শুক্রবার লাতিন আমেরিকার আকাশেও একটি বেলুন শনাক্ত হয়।
লাতিন আমেরিকার আকাশে দেখা যাওয়া বেলুনটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে দেখা যাওয়া বেলুনটি আলাদা কি না, সে সম্পর্কে খুব একটা তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। দ্বিতীয় বেলুনটির যথাযথ অবস্থান সম্পর্কেও প্রাথমিকভাবে তথ্য সরবরাহ করেনি পেন্টাগন।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা–বিশেষজ্ঞ ইয়ান চং ডয়চে ভেলেকে বলেন, বেলুনগুলো সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা নেই। বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশেও এগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।
ইয়ান চং ডয়চে ভেলেকে আরও বলেন, ‘সাধারণত উঁচুতে ওড়ার সক্ষমতাসম্পন্ন বেলুনগুলো বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চালাতে পারে। বাতাস থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য ছবি তোলা থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংকেত সংগ্রহ করা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারে তারা।’
চংয়ের মতে বেলুনগুলো ওড়ানোর উদ্দেশ্য ঠিক কী ছিল, সে সম্পর্কে এখনো যথেষ্ট তথ্য হাতে পাওয়া যায়নি।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, সম্প্রতি আলাস্কায় মার্কিন আকাশসীমায় পৌঁছানোর আগেই প্রথম বেলুনটি সম্পর্কে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার বেলুনটি শনাক্ত হওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় পেন্টাগন। এক বিবৃতিতে পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার বলেন, এ বেলুনে অস্ত্র নেই। অর্থাৎ এটি সামরিক হুমকি তৈরি করছে না।
প্যাট রাইডার আরও বলেছেন, বেলুনটি শনাক্ত হওয়ার পর যেন স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ না করতে পারে, তা নিশ্চিতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বেলুন শনাক্ত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বেইজিং সফর স্থগিত করেছেন। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে পরবর্তী সময়ে সফরের সময়সূচি নির্ধারণ করা হবে।
গতকাল শনিবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন, তাঁর দেশ কখনো কোনো সার্বভৌম দেশের ভূখণ্ড ও আকাশসীমা লঙ্ঘন করে না।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ওয়েন তি সাং ডয়চে ভেলেকে বলেন, এ ঘটনায় বোঝা গেছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক কতটা নড়বড়ে। অপেক্ষা ছোটখাটো এসব ঘটনায় যদি বহুল প্রত্যাশিত একটি সফর বাতিল করা হয়, তাহলে বোঝা যায় দীর্ঘ মেয়াদে নির্ভরযোগ্য সহযোগী হওয়ার মতো আস্থা তাদের মধ্যে নেই।
তি সাং মনে করেন, চীনকে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পথও খুঁজতে হবে। কারণ, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই ব্লিঙ্কেন বেইজিং সফর স্থগিত করেছেন।