যুক্তরাষ্ট্র–অস্ট্রেলিয়া–যুক্তরাজ্য
চীনকে ঠেকাতে নতুন পরিকল্পনা
তিন দেশের নেতারা বৈঠকে অস্ট্রেলিয়াকে পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন দেওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছেন।
চীনকে ঠেকাতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য। গতকাল সোমবার এই তিন দেশের নেতারা বৈঠকে অস্ট্রেলিয়াকে পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন দেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়টি সামনে এনেছেন। একে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ওপর বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়োগোর নৌঘাঁটিতে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বৈঠকে তাঁরা তিন দেশের সমন্বয়ে গড়া প্রতিরক্ষা জোট এইউকেইউএস চুক্তিতে সমর্থনের কথা বলেন।
২০২১ সালে এ অঞ্চলে একটি বিশেষ কৌশলগত নিরাপত্তা চুক্তি হিসেবে এইউকেইউএসের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই সময় চুক্তির অধীনে সাবমেরিন ক্রয়সহ অন্যান্য বিষয়েও সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদি।
মার্কিন কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এইউকেইউএস চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তিনটি পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন কিনবে। প্রয়োজনে তারা আরও দুটি সাবমেরিন কিনতে পারবে। এ চুক্তির কয়েকটি ধাপ থাকবে। এর মধ্যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই অন্তত একটি সাবমেরিন পাবে অস্ট্রেলিয়া। ২০৩০ সালের মধ্যে নতুন প্রযুক্তির সাবমেরিন অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হবে। এসব সাবমেরিন তৈরি হবে যুক্তরাজ্যের নকশা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিতে।
চুক্তি অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে প্রতিরক্ষা জোরদারে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাবমেরিন মোতায়েন করা হবে। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার ক্রুরা প্রশিক্ষণ নেবেন।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিকীকরণ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও এই অঞ্চলের দেশগুলোর। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশই নিজেদের বলে দাবি করে চীন। তবে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনসহ বেশ কয়েকটি দেশও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে তাদের দাবি তুলে ধরেছে। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বেইজিংয়ের প্রায়ই উত্তেজনা দেখা যায়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় একটি সাবমেরিন মোতায়েনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরের কয়েক বছরে সেখানে চারটি মার্কিন ও যুক্তরাজ্যের একটি সাবমেরিন মোতায়েন করা হবে।
১৯৫০ সালের পর এই প্রথম এইউকেইউএস চুক্তির মাধ্যমে ওয়াশিংটন তাদের পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন প্রযুক্তি কাউকে দিতে যাচ্ছে। চীনের পক্ষ থেকে এইউকেইউএস নিয়ে নিন্দা করে বলা হয়েছে, এটি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারে অবৈধ চুক্তি। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য মিলিতভাবে অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন পেতে সুযোগ করে দিয়েছে।
পশ্চিমা আরেক মিত্র ফ্রান্সও এ পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। ফ্রান্স বলেছে, তাদের পেছন থেকে ছুরি মারা হয়েছে। মিত্রদেশ হয়েও ফ্রান্সের স্বার্থ বিবেচনা করা হয়নি। এই চুক্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দেশটির সাবমেরিন বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছিল। ওই চুক্তির আর্থিক মূল্য ছিল চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার। পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন পেতে ওই চুক্তি বাতিল করে অস্ট্রেলিয়া।
নতুন পরিকল্পনা নিয়ে অবশ্য বড় প্রশ্নও রয়ে গেছে। এর মধ্যে মার্কিন প্রযুক্তি বিনিময়ে কঠোর নীতি ও সাবমেরিন সরবরাহ করার সময়সীমার বিষয়গুলো রয়েছে। এর পাশাপাশি চীনের হুমকিও দিন দিন বাড়ছে। অস্ট্রেলিয়াকে যে সাবমেরিন দেওয়া হবে, সেগুলোকে বলা হয় ভার্জিনিয়া ক্লাস। এগুলো তৈরিতে কাজ করছে জেনারেল ডাইনামিকস নামের প্রতিষ্ঠান। ২০৩২ সালের মধ্যে তাদের ১৭টি সাবমেরিন তৈরির কাজ চালু রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ গত শনিবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে করা এই চুক্তিতে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া উপকৃত হবে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। ২০২০ সালে ব্রেক্সিটের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়া যুক্তরাজ্য বলছে, তাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটাবে এ চুক্তি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, মিত্রদের সঙ্গে বন্ধন দৃঢ় হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা, নতুন প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস গত সপ্তাহে বলেন, এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে তাদের সাবমেরিন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও প্রয়োজনে জোর করে স্বশাসিত তাইওয়ানকে একীভূত করার পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে এইউকেইউএসকে দ্বিতীয় ধাপে নেওয়ার বিষয়টি অত্যাবশ্যক।