চীনে ‘ভালোবাসার বন্ধনে’ জড়িয়ে আছেন ইলন মাস্কের মা

ইলন মাস্কের সঙ্গে মায়ে মাস্কছবি: মায়ে মাস্কের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে

মায়ে মাস্ক ব্যস্ত একজন নারী। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তির মা হওয়ার সুবাদে তাঁকে পৃথিবীর নানা প্রান্তের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয়, যার অনেকগুলো হয়ে থাকে চীনে। চলতি ডিসেম্বর মাসেই তিনি হাংজু শহরে একটি জমকালো নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন, উহানে প্রসাধন কোম্পানির লালগালিচায় হেঁটেছেন, নিজের বই ‘আ উইমেন মেকস আ প্ল্যান’ বইয়ের চীনা সংস্করণের অনেকগুলো কপিতে স্বাক্ষর করেছেন। বইটি চীনে ‘বেস্টসেলার’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

গত অক্টোবর মাসে চীনে ইলন মাস্ক–সম্পর্কিত যে একমাত্র বইটি বেস্টসেলারের তালিকায় ছিল, তা তাঁর ছেলে ইলন মাস্কের জীবনীগ্রন্থ। বইটি লিখেছেন ওয়াল্টার আইজ্যাকসন। ইলন মাস্ক চীনে জনপ্রিয়।

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন প্রশাসনে প্রচণ্ড চীনবিরোধী কিছু ব্যক্তি থাকছেন। তা সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের মনোভাব বেইজিংমুখী রাখতে ইলন মাস্ক কাজ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নিজের মহাকাশ কোম্পানি স্পেসএক্সের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় ইলন মাস্ক কিছুটা চাপে আছেন।

ইলন মাস্কের মা হিসেবে মায়ে মাস্ক চীনে তুমুল ভালোবাসা পেয়ে আসছেন। ‘প্রায় প্রতি মাসেই’ তিনি দেশটিতে সফর করেন বলে জানিয়েছেন। অনেকে তাঁকে চীনে ইলন মাস্কের গোপন অস্ত্র বলেও মন্তব্য করেছেন। কারণ, নিজের সন্তানের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক ব্যবসা ও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষায় শক্তি জোগানোর মতো সামর্থ্য তাঁর রয়েছে।

চীনা ভাষায় প্রকাশিত নিজের ‘আ উইমেন মেকস আ প্ল্যান’ বইয়ে স্বাক্ষর করছেন মায়ে মাস্ক
ছবি: মায়ে মাস্কের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে


চীন নিয়ে নিজের অনুভূতি স্পষ্ট করে বলেছেন মায়ে মাস্ক। গত অক্টোবরে এক টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘সড়ক, সুড়ঙ্গ, ভবন, অবকাঠামো ও বন্দরের দিক থেকে চীন অনেক উন্নত।’ নভেম্বর মাসে সাংহাইয়ে টেসলার বৈদ্যুতিক গাড়ির অনেকগুলো ছবি পোস্ট করেছেন তিনি। এসব ছবির সঙ্গে যুক্ত করেছেন কিছু ইমোজি।

৭৬ বছর বয়সী এই নারী একজন সফল মডেল ও পুষ্টিবিশেষজ্ঞ। তাঁর ছেলের বৈদ্যুতিক গাড়ি টেসলার সবচেয়ে বড় কারখানা সাংহাইয়ে অবস্থিত। ইলন মাস্ককে প্রায়ই চীন সফর করতে হয়। এখানে বড় ব্যবসা থাকায় চীনে মাস্ক–ভক্তদের বড় বাজার রয়েছে। এটা মায়ে মাস্কের জন্য সেখানে বিশেষ সুবিধা করে দিয়েছে।

মায়ে মাস্কের পরিচিতিও চীনে ধীরে ধীরে বাড়ছে। কানাডায় জন্মগ্রহণকারী এই নারী বেড়ে উঠেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। নিজের কাজ ও পরিবারের কারণে তিনি বিশ্বের অনেক দেশে সফর করেছেন।

‘দোবান’ নামে চীনা ভাষার পর্যালোচনাবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে মায়ে মাস্কের স্বাধীন জীবন নিয়ে অনেক প্রশংসাসূচক মন্তব্য রয়েছে। তাঁর বইয়ের এক ভক্ত লিখেছেন, ‘স্বাধীন, আত্মনির্ভর এবং নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে তিনি একজন অনুসরণীয় নারী মডেল। শৈশব থেকেই নিজের পরিবারের আবহে তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হয়েছে। অনেক দেশে থাকার অভিজ্ঞতার কারণে তিনি সংস্কৃতি ও জীবন সম্পর্কে তুলনামূলকভাবে বেশি সহনশীল। তিনি বারবার নিজের চেনা-জানা পরিবেশ ছাড়তে পেরেছেন।’

অনেক ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করার কারণে মায়ে মাস্কের কর্মজীবনও ঋদ্ধ হয়েছে। গত বছর তিনি চীনা ভোক্তা ইলেকট্রনিকস কোম্পানি অপোর বিশ্ব দূত হিসেবে কাজ করেছেন। চলতি বছর থেকে তিনি তোশক কোম্পানি ‘আইসি বাওবাও’-এর প্রতিনিধিত্ব করছেন। গত নভেম্বরে সাংহাইয়ে ব্র্যান্ডটির নতুন শাখার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নিয়েছেন।

চীনের একটি সাময়িকীর প্রচ্ছদে মায়ে মাস্ক
ছবি: মায়ে মাস্কের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে


সম্প্রতি তিনি হাংজুতে চীনের ফ্যাশন কোম্পানি জেএনবিওয়াই ও খেলাধুলার সামগ্রীর ব্র্যান্ড ফিলার অনুষ্ঠানে অংশ নেন। গত অক্টোবরে মায়ে মাস্ক সাংহাইয়ে ইতালির বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ড মনক্লার একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। একই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রের গায়ক রিয়ানা ও এএসএপি রকির সঙ্গে তোলা ছবি তিনি নিজের চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।

ইনস্টাগ্রামের মতো চীনের সামাজিক প্ল্যাটফর্ম জিয়াওহংশুতে মায়ে মাস্কের অনুসারীর সংখ্যা ৫ লাখ ৭৭ হাজার। প্ল্যাটফর্মটি তরুণীদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। টিকটকের চীনা সংস্করণ ‘ডুয়িন’-এ তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ৩ লাখ ৫৬ হাজার। মাইক্রোব্লগিং সাইট উইবোতে তাঁর অনুসারী ৪৬ হাজার ২০০। এই সাইটকে প্রায় সময় তাঁর ছেলের মালিকানাধীন এক্সের (সাবেক টুইটার) সঙ্গে তুলনা করা হয়।