চীনের করোনা নিয়ে উদ্বেগে বিশ্ব

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে ভিড় বেড়েছে
ছবি: রয়টার্স

বিক্ষোভের মুখে চীন তাদের কঠোর কোভিড বিধিনিষেধ শিথিল করে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পর্যটকদের জন্য কোয়ারেন্টিন বিধিমালা বাতিল করার মতো পদক্ষেপও। কিন্তু তাদের এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক পর্যায়ে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব পড়বে, তার ওপর চোখ রাখছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ চীনের করোনার সংক্রমণ রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসির।

গত সোমবার বিদেশফেরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের বিধি বাতিলের ঘোষণা দেয় চীন। ঘোষণা অনুযায়ী, ৮ জানুয়ারি থেকে এ বিধি আর কার্যকর থাকবে না। এই ঘোষণা আসার পর থেকে বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ছড়ানো নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। করোনার সংক্রমণ যাতে বাড়তে না পারে, সে জন্য ভারত ও জাপান সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের ওপর নতুন কোভিড বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, চীনের করোনার সংক্রমণ ঘিরে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। তাই তাঁদের সতর্ক থাকতে হচ্ছে। মালয়েশিয়া ও তাইওয়ানও চীনে নতুন করে সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার সংক্রমণ রোগবিশেষজ্ঞ ডমিনিক ড্রয়ার বলেন, ‘কোভিড তথ্য নিয়ে চীনের স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এ মুহূর্তে দেশটিতে করোনার কোন ধরন বেশি ছড়াচ্ছে, তা আমরা জানতে পারছি না। করোনার টিকা এই ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর কি না, এ তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না।’

২০২০ সাল থেকে শূন্য করোনা নীতির আওতায় চীনে করোনার কঠোর বিধিনিষেধ চলছিল। সম্প্রতি ওই বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামেন দেশটির অনেক শহরের বাসিন্দা। এরপর চলতি মাসের শুরুর দিকে বেশির ভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেয় চীন সরকার। তার পর থেকেই দেশটিতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে দেখা গেছে। সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে চীন।

ডমিনিক ড্রয়ার আরও বলেন, চীন শূন্য করোনা নীতির বিষয়টি দ্রুত পরিবর্তন করে বিধিমালা পুরোপুরি শিথিল করে দিয়েছে। তাই সেখানে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়েছে। তবে চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার দেশটিতে করোনায় মাত্র তিনজন মারা গেছেন। কিন্তু যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ারফিনিটির ধারণা, চীনে এখনো ১০ লাখের বেশি করোনা রোগী রয়েছেন। সেখানে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এয়ারফিনিটির প্রধান লুইস ব্লেয়ার বলেন, কোভিড-১৯-এ মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির রেকর্ড বদলে ফেলেছে চীন। কেবল করোনা শনাক্তের পর শ্বাসকষ্টে বা নিউমোনিয়ায় কেউ মারা গেলে তাঁর করোনায় মৃত্যু হয়েছে বলে হিসাব করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্যের অভাবে চীনের করোনার তীব্রতার বিষয়টি ফুটে উঠছে না। তবে সেখানকার চিকিৎসকেরা সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক বেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন। বেইজিংভিত্তিক চিকিৎসক হাওয়ার্ড বার্নস্টাইন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, জরুরি সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। অনেক হাসপাতালের আইসিইউ ভরে গেছে।

চীনের এ পরিস্থিতির কারণেই প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিজস্ব প্রতিরোধব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। গত মঙ্গলবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, ৩০ ডিসেম্বর থেকে চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ দেখাতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস চীনকে করোনার তথ্য দিতে বলেছেন। দেশটিতে বর্তমানে করোনার কোন ধরন ছড়াচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করতে এ তথ্য জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। গত ২১ ডিসেম্বর গেব্রেয়াসুস এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন, করোনাভাইরাস নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর গণমাধ্যমগুলের অতিরঞ্জিত করার বিষয়ে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, চীনের কোভিড নীতির সমন্বয়কে বিকৃত করে দেখানো হচ্ছে।

ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, চীন মনে করে, বিশ্বের সব দেশের করোনা প্রতিক্রিয়া বিজ্ঞানভিত্তিক হওয়া উচিত এবং সাধারণ মানুষের চলাফেরা বাধাগ্রস্ত হয়, এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন