চীন–জাপানে ছড়াচ্ছে এইচএমপিভি ভাইরাস, নতুন মহামারির শঙ্কা

এইচএমপিভি প্রতিরোধে করোনার মতোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরাফাইল ছবি: রয়টার্স

নতুন আতঙ্ক দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব বেড়েছে চীন আর জাপানে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। ভাইরাসটি করোনার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
 
বিশেষজ্ঞদের অনেকের শঙ্কা, ২০২৫ সালে আবার করোনার মতো নতুন কোনো মহামারির উদ্ভব হতে পারে। যদিও কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এইচএমভির প্রাদুর্ভাব ভাবাচ্ছে তাঁদের।

যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক মাইকেল হেড বলেন, ‘আরও একটি মহামারির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এখনো কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সেটি নিশ্চিত না বলে আগাম মহামারির নাম দেওয়া হয়েছে ডিজিজ এক্স।’
 
হাম, কলেরা, বার্ড ফ্লু ও স্ক্যাবিসের মতো প্রায় ১১টি রোগকে সম্ভাব্য মহামারির তালিকায় রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে এইচএমপিভির সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে।

চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, করোনার সময়ে হাসপাতালে যেভাবে ভিড় তৈরি হয়েছিল, একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবেও। একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে জাপানেও। দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, চলতি মৌসুমে দেশটিতে ঠান্ডাজনিত সংক্রমণ ছাড়িয়েছে সাত লাখেরও বেশি মানুষের মধ্যে।

মাইকেল হেড বলেন, ‘আগামীর মহামারির প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে মারাত্মক ছোঁয়াচে। মানুষের মৃত্যুহার পৌঁছাবে সর্বোচ্চে।’

চীনের বর্তমান অবস্থা

চীনে প্রতিনিয়ত এইচএমপিভি প্রকট হয়ে উঠলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা দেশটির সরকার সতর্কতা জারি করেনি। যেভাবে ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে, তাতে করে যেকোনো সময়ে দেশটি জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে বলেও দাবি বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের।

দেশটিতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। বিশেষ করে আগে যাঁদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল, তাঁরা নতুন এই ভাইরাসের আক্রমণে নাজুক অবস্থায় আছেন।

জ্বর, নাক বন্ধ, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো সাধারণ ঠান্ডাজনিত সমস্যা দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তী সময় এই ভাইরাসের সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় সংক্রমণের তীব্রতা ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা কানে ইনফেকশনের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

সতর্ক অবস্থানে ভারত

এইচএমপিভি ভাইরাস চীন থেকে যাতে করোনার মতো ভারতে ছড়িয়ে না পড়ে, তাই আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে আছে দেশটি। ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক অতুল গয়াল জানিয়েছেন, শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত কোনো সমস্যা এখন থেকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। এ ধরনের জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গয়াল বলেন, ‘আপাতত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রাথমিকভাবে এটিকে সাধারণ ফ্লু বলেই মনে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত শঙ্কার কোনো বার্তা আমাদের কাছে আসেনি, তবে যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের নির্দেশ দেওয়া আছে।’

প্রতিরোধ ও প্রতিকার

প্রায় দুই দশক আগে প্রথমবারের মতো এইচএমপিভি ভাইরাস উপস্থিতি জানান দিলেও এখন পর্যন্ত এর টিকা আবিষ্কার হয়নি। চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল, একই পদক্ষেপে এই ভাইরাসও প্রতিরোধ করা সম্ভব।

টানা ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাতে নাক-মুখ স্পর্শ না করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার মধ্য দিয়ে এইচএমপিভি থেকে নিরাপদ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।