তীব্র দাবদাহে চীনের অর্ধেক এলাকায় খরা
রেকর্ড তাপমাত্রায় চীনের অর্ধেক অঞ্চলজুড়ে তীব্র খরা দেখা দিয়েছে। এমনকি হিমশীতল এলাকা হিসেবে পরিচিত তিব্বতীয় মালভূমিতেও তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে—এমন পূর্বাভাসের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার চীন সরকারের প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তে এসব জানানো হয়।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনে ৭০ দিন ধরে একটার পর একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, আরও বেশি বেশি দাবানল, বন্যা ও খরার মতো পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়াজনিত বিরূপ এই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
চীনের কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, ছয় দশকের বেশি সময় ধরে তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দাবদাহ চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে খারাপ দাবদাহগুলোর এটি একটি হতে পারে।
গতকাল বুধবার চীনের ন্যাশনাল ক্লাইমেট সেন্টারের তথ্যমতে, তিব্বতীয় মালভূমিসহ দক্ষিণ চীনের বিশাল অংশে ‘তীব্র’ ও ‘নজিরবিহীন’ খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খরায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে ইয়াংজি নদী অববাহিকার এলাকাগুলো। ইয়াংজির অববাহিকাটি সাংহাইয়ের উপকূলীয় এলাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের সিচুয়ান প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। ইয়াংজি অববাহিকায় ৩৭ কোটির বেশি মানুষ বাস করে।
বড় শহর চংকিং এবং সিচুয়ান ও ঝেজিয়াং প্রদেশের অব্যাহত উচ্চ তাপমাত্রা বৃহস্পতিবার ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াতে পারে বলে ধারণা দেশটির আবহাওয়া কর্তৃপক্ষের। তবে কোনো কোনো অঞ্চলে দাবদাহের তীব্রতা কিছুটা কমেছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি বলেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ানের কিছু অংশে বুধবার রাতে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এতে দাবদাহের তীব্রতা কিছুটা কমলেও অঞ্চলটির প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে গুয়ানদং প্রদেশ এবং আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ের উপকূলে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় মা-অন।
চীনের কর্তৃপক্ষ বলছে, দক্ষিণ চীন, জিয়াংজি এবং আনহুই অঞ্চলে উচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। কিন্তু আগামী তিন দিন সিচুয়ান অববাহিকা ও সাংহাইয়ের আশপাশের প্রদেশগুলোতে চলমান এই উচ্চ তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে।
কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হওয়ায় একাধিক প্রদেশে শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। অপর দিকে অনেক শহরে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ–সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ–সংকটের কারণে বেশ কিছু কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।