কোটি কোটি চীনা নাগরিকের তথ্য চুরি করে অনলাইনে বিক্রি
চীনের কয়েক কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির দাবি করেছেন একজন হ্যাকার। চুরি করা ওই সব তথ্য এখন অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। নমুনার অংশ হিসেবে সাড়ে সাত লাখ চীনা নাগরিকের তথ্য অনলাইনে পোস্টও করেছেন ওই হ্যাকার। তাতে চীনা নাগরিকের নাম, মুঠোফোন নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ঠিকানা, জন্মদিন ও পুলিশের কাছে দেওয়া অভিযোগের তথ্য রয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি ও সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা ওই নমুনাগুলো থেকে কিছু তথ্য নিয়ে তা যাচাই করেছেন। এতে চুরি করা তথ্য সঠিক হিসেবে প্রমাণ মিলেছে। তবে পুরো ডেটাবেজের পরিধি শনাক্ত করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
গত মাসে অনলাইনের একটি ফোরামে ওই তথ্য বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এ সপ্তাহে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা তথ্যগুলোর পর্যালোচনা শুরু করেন। ২৩ টেরাবাইটের ডেটাবেজে ১০০ কোটি চীনা নাগরিকের তথ্য রয়েছে বলে ওই হ্যাকারের দাবি। এই তথ্য বিক্রি করতে ১০ বিটকয়েন চেয়েছেন তিনি। ১০ বিটকয়েন এখন প্রায় ২ লাখ মার্কিন ডলারের সমান।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট টু পয়েন্ট জিরোর সহপ্রতিষ্ঠাতা রবার্ট পর্টার বলেন, ‘তথ্যের ধরন দেখে মনে হয়, এগুলো একাধিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা। এর মধ্যে মুখায়ব শনাক্তকরণ পদ্ধতির তথ্যের পাশাপাশি জনশুমারির তথ্যও রয়েছে। পুরো তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ১০০ কোটি জনগণের তথ্য নিয়েও সংশয় রয়েছে।
চীন দেশজুড়ে ব্যাপক নজরদারি অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। এ থেকে জনগণের ওপর ব্যাপক নজরদারি করতে পারে দেশটির কর্তৃপক্ষ। সাধারণত নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এ নজরদারি করা হয়।
তথ্য গোপনীয়তা সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যক্তি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে লক্ষ্য করে শক্তিশালী তথ্য সুরক্ষা আইন তৈরি হয়েছে। তবে রাষ্ট্রের নজরদারির বিরুদ্ধে ব্যক্তির পক্ষে খুব বেশি কিছু করার থাকে না।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, অনলাইনে দেওয়া হ্যাকারের তথ্য সঠিক কি না, জানতে এক ডজনের বেশি ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা। এর মধ্যে চারজন ডেটাবেজে তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হাও নামের এক চীনা নারী বলেন, কয়েক দিন ধরে হঠাৎ তাঁর উইচ্যাটে (চীনে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) লোকজনের যুক্ত হওয়ার হার বেড়ে গেছে। তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানাবেন কি না, তা ভাবছেন।
অনেকেই ধারণা করছেন, জনপ্রিয় ই–কমার্স সাইট আলিবাবার ক্লাউড সার্ভার থেকে এই তথ্য হ্যাকড হতে পারে। সাংহাই পুলিশ এই সার্ভারে তথ্য রাখে। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ পটার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আলিবাবা ক্লাউড থেকে এসব তথ্য চুরি হয়েছে। অবশ্য আলিবাবার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। আলিবাবার পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে এটাই হবে ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ হ্যাকিংয়ের ঘটনা।