মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় নানা নকশার, নানা সৌন্দর্যের মসজিদ গড়ে উঠেছে। কিছু কিছু মসজিদ এতটাই দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়েছে, যেগুলো দেখতে সারা দুনিয়া থেকে শুধু মুসলিমরা নন, অনেক অমুসলিম পর্যটকও ভিড় করেন।
বিশ্বে দৃষ্টিনন্দন হিসেবে খ্যাতি পাওয়া ১০টি মসজিদসংক্রান্ত তথ্য প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদের অবস্থান। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গালিচাটি এখানেই বিছানো আছে। ১ হাজার ২০০ জন কারিগর মিলে গালিচাটি তৈরি করেছিলেন।
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে ১২ টনের একটি বিশাল ঝাড়বাতি আছে। এটি ক্রিস্টালের তৈরি।
মামলুক, ফাতিমি ও ওসমানীয় সাম্রাজ্যের মিশ্র ধাঁচে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে। টেলিগ্রাফ ট্রাভেলসের আবুধাবিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এ মসজিদকে ‘যুগান্তকারী ভবন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় জেরুজালেমের দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির নাম রয়েছে। ‘হারাম আল শরিফ’ নামে পরিচিত চত্বরের ভেতর আল আকসার অবস্থান। এটি ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিভিন্ন সময় ভূমিকম্পে আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। বেশ কয়েকবারই এটিকে পুনর্গঠন করা হয়েছে। মধ্যযুগীয় ক্রুসেডাররা এটিকে প্রাসাদ হিসেবে ব্যবহার করত। পরে ইসলামি খেলাফতের অধীনে এর সংস্কার করে আবারও এটি প্রার্থনার স্থানে পরিণত করা হয়।
মসজিদুল হারাম নামের মসজিদটির অবস্থান সৌদি আরবের মক্কায়। এখানে ৪০ লাখ মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। ৯৯ একর জায়গাজুড়ে মসজিদটির অবস্থান। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে দুই জায়গাতেই নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা আছে।
পবিত্র কাবাঘরের দেয়ালে স্থাপিত ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথরের অবস্থানও এখানে।
অমুসলিমদের মক্কায় ঢোকার অনুমতি নেই।
মসজিদটি সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। মহানবী (সা.) নিজে এ মসজিদ তৈরি করেছেন। এটি ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। মহানবীর (সা.) রওজা মোবারকও এখানে অবস্থিত।
মসজিদে ১০টি মিনার আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু মিনারটির উচ্চতা ১০৫ মিটার বা ৩৪৪ ফুট। ছয় লাখ মানুষকে ধারণ করার ক্ষমতা আছে মসজিদটির। তবে পবিত্র হজের সময় এ ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে ১০ লাখ করা হয়। অমুসলিমদের মদিনার কিছু অংশে ঢোকার অনুমতি নেই।
আয়া সোফিয়া নামের দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদের অবস্থান তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত এ স্থাপনা শুরুতে মসজিদ ছিল না। ওসমানীয় সম্রাট ইস্তাম্বুল শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ভবনটিকে মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ভবনটিতে মিহরাব, মিম্বার ও খুতবা দেওয়ার জায়গা তৈরি করা হয়। আয়া সোফিয়া মসজিদটি মোজাইক দিয়ে তৈরি করা। সেখানে আরবি ভাষায় পবিত্র কোরআনের আয়াতও খোদাই করা আছে। রাজকীয় ধাঁচের পুরোনো এ মসজিদটির একটি অংশ বর্তমানে জাদুঘরে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদগুলোর একটি এটি। এর অবস্থান পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে। ফয়সাল মসজিদের সমসাময়িক নকশাটি করেছেন তুরস্কের স্থপতি বেদাত দলোকায়। মক্কার কাবা শরিফ এবং বেদুইন তাঁবু থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এর কংক্রিটের ছাদটিকে আটটি অংশে ভাগ করা হয়েছে।
খালেদ হোসেইনির লেখা ‘দ্য কাইট রানার’ বইতে ফয়সাল মসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ার সেলানগরে এ মসজিদের অবস্থান। এটি দেশটির বৃহত্তম মসজিদ। সেখানে মিসরের এক ক্যালিগ্রাফারের ক্যালিগ্রাফি খোদাই করা আছে। মসজিদটির জানালার কাচগুলোও দৃষ্টিনন্দন। ইস্পাতের আবরণে ঢাকা এর গম্বুজগুলোয় পবিত্র কোরআনের আয়াত খোদাই করা আছে।
এ মসজিদে একসঙ্গে ২৪ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
দ্বিতীয় হাসান মসজিদের অবস্থান মরক্কোতে। এ মসজিদে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মিনার। মিনারটির উচ্চতা ২১০ মিটার। মসজিদটি বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদগুলোর একটি। মরক্কোতে এটিই একমাত্র মসজিদ, যেখানে মুসলিমদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষেরা প্রবেশ করতে পারেন।
কাসাব্লাঙ্কায় সাগরের কোল ঘেঁষে মসজিদটি গড়ে উঠেছে। এখানকার স্বচ্ছ কাচের তৈরি মেঝে দিয়ে নিচের দিকে তাকালে সাগরের পানি দেখা যায়।
সুলতান কাবুস মসজিদের অবস্থান ওমানে। মাসকট শহরের একটি সড়কপথের পাশে এটি গড়ে উঠেছে। সুলতান কাবুস মসজিদের বাগানের ভেতরে একবার ঢুকলেই মন যেন প্রশান্তিতে ভরে যায়।
এখানকার আঙিনা শান্তিপূর্ণ। এখানকার তোরণ মার্জিত। সবচেয়ে প্রার্থনার এ স্থানটি ওমানের একটি দৃষ্টিনন্দন স্থানে পরিণত হয়েছে।
মসজিদের কেন্দ্রীয় মিনারটি ৯১ দশমিক ৫ মিটার (৩০০ ফুট) উঁচু। মসজিদে নামাজ আদায়ের মূল অংশটিতে একটি পার্সিয়ান গালিচা বিছানো। ৬০০ নারী চার বছর ধরে গালিচাটি তৈরি করেছেন।
তাজ–উল–মসজিদ নামের অর্থ মসজিদের তাজ। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভোপাল এলাকায় এ মসজিদের অবস্থান। এতে ১৮ তলা উচ্চতার সমান দুটি মিনার আছে। মসজিদের গম্বুজগুলো মার্বেল পাথরের। মসজিদের প্রবেশদ্বারটি দ্বিতল।
তাজ–উল–মসজিদ ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় মসজিদ।