তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এলেই শীতে কাবু হয়ে পড়েন অনেকে। তবে বিশ্বের এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে আসে, তুষারপাত হয়। আবার, অনেক জায়গায় তাপমাত্রা এতটাই নিচে নামে যে মানুষের পক্ষে সেখানে থাকা দুরূহ হয়ে পড়ে। আসুন, একনজরে বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম ১০টি জায়গার সঙ্গে পরিচিত হই। জেনে নিই কবে, কখন এসব জায়গায় তাপমাত্রা অনেক কমে গিয়েছিল আর কত নিচেই বা নেমেছিল তাপমাত্রা—
বিশ্বের সবচেয়ে শীতল জায়গার কথা উঠলে নিশ্চিতভাবে ডোম ফুজির নাম আসবে। শুভ্র বরফে ঢাকা এন্টার্কটিকার সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়ে এখানে। বেশি দিন আগের কথা নয়, ২০১০ সালের আগস্টে এখানে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। তাপমাত্রা নেমেছিল মাইনাস ৯২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর মধ্য দিয়ে এটা বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম জায়গার স্বীকৃতি পেয়েছে।
বরফাচ্ছাদিত এন্টার্কটিকার আরেক শীতলতম জায়গা ভস্তক রিসার্চ সেন্টার। এটা বিশ্বের দ্বিতীয় শীতলতম জায়গা হিসেবেও পরিচিত। ১৯৮৩ সালের জুলাইয়ে এ গবেষণাগারের আশপাশে তাপমাত্রা মাইনাস ৮৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসার ঘটনা ঘটে। এরও আগে ১৯৫৭ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকার এখানে গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করেছিল।
এন্টার্কটিকার আমান্ডসেন-স্কট সাউথ পোল স্টেশনে যাঁরা থাকেন ও গবেষণাকাজ করেন, তাঁরা সবাই বছরে একবার সূর্যোদয় দেখতে পান। সূর্যাস্তও দেখেন বছরে একবার। চরম শীত আর পুরু বরফের কারণে জায়গাটি ভীষণ রকমের প্রতিকূল। ১৯৮২ সালের জুলাইয়ে এ জায়গায় মাইনাস ৮২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
অ্যান্টার্কটিকার বরফাচ্ছাদিত এলাকাগুলোয় তাপমাত্রা এমনিতেই কম থাকে। এর মধ্যে ডোম আরগাস বিশেষভাবে পরিচিত। ২০০৫ সালের জুলাইয়ে এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। ওই সময় এখানে তাপমাত্রা নেমেছিল মাইনাস ৮২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা একটি পাহাড়ি এলাকা। উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ এখানে অবস্থিত। অঞ্চলটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ছয় হাজার মিটার উঁচুতে। শীতও পড়ে বেশ। ১৯৫০ থেকে ১৯৬৯ সালের মাঝামাঝি কোনো একসময় এ এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৭৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর ২০০৩ সালেও এখানে মাইনাস ৭৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে।
রাশিয়ার আর্কটিক অঞ্চলের একটি জায়গা ভারখয়নস্ক। প্রায় এক হাজার মানুষ বসবাস করেন এখানে। এ জায়গায় ১৮৯২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভয়ানক ঠান্ডা পড়েছিল। তাপমাত্রা নেমে এসেছিল মাইনাস ৬৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তাই এ জায়গাটিকে উত্তর আর্কটিকের ‘শীতল মেরু’ বা ‘পোল অব কোল্ড’ নামে ডাকা হয়।
গ্রিনল্যান্ডকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ। তবে মানব বসতি বেশ কম। বিশাল দ্বীপের বেশির ভাগ জায়গা বরফে ঢাকা থাকে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে গ্রিনল্যান্ডের ক্লিঙ্ক রিসার্চ স্টেশনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৬৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সময়টা ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারি। রাশিয়ার ওয়মেকন অঞ্চলে তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ কমে গিয়েছিল। তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল মাইনাস ৬৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়লেও অঞ্চলটি জনমানবহীন নয়। ওই অঞ্চলে হাজারের কম মানুষের বসতি রয়েছে।
নাম গ্রিনল্যান্ড হলেও দেশটি আদতে শুভ্র বরফে ঢাকা। গ্রিনল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে নর্থ আইস নামক জায়গায় একটি গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে। ১৯৫৪ সালের জানুয়ারিতে সেখানে মাত্রাতিরিক্ত কম তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। ওই সময় তাপমাত্রা নেমে এসেছিল মাইনাস ৬৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
অত্যধিক শীতের কারণে কানাডার ইউকন অঞ্চলের স্ন্যাগ গ্রামটি এখন বলতে গেলে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। গত শতকের চল্লিশের দশকে এখানে শীতকাল বেশ প্রকট রূপে হাজির হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ গ্রামে তাপমাত্রা নেমে দাঁড়ায় মাইনাস ৬২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।