'আমি শ্বাস নিতে পারছি না, মরে যাচ্ছি'
নুয়েন থি ফাম ও ফেম ভান থিন দম্পতি থাকেন নেহেনের একটি ছোট্ট বাড়িতে। নেহেন শহরটি ভিয়েতনামের উপকূলীয় প্রদেশ হা তিনহে অবস্থিত। সংসারে দিন এনে দিন খাওয়া অবস্থা তাঁদের। দুজনের মিলে মাসিক আয় ৪০০ মার্কিন ডলার। কিন্তু মেয়ে ফেম থি তারা মাইয়ের উন্নত জীবনের আশায় যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য ধার–দেনা করে মানব পাচারকারীদের বিপুল অর্থ পরিশোধ করেন তাঁরা। মেয়ের সেই লন্ডনযাত্রা শেষ হয়েছে বিয়োগান্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। গত বুধবার লন্ডনের এসেক্সের একটি শিল্পাঞ্চলে একটি রেফ্রিজারেটর লরির মধ্য থেকে যে ৩৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, ফেম থি তারা মাই তাঁদেরই একজন বলে মনে করা হচ্ছে।
ফেম থি তারা মাই যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মা–বাবাকে মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠান। ওই সময় লরিটি যুক্তরাজ্যের পারফ্লিট বিমানবন্দরে অবস্থান করছিল বলে মেরিটাইম টেবিলের তথ্যে জানা গেছে। খুদে বার্তায় ২৬ বছর বয়সী ওই ভিয়েতনামী নারী লেখেন, ‘বাবা, মা—আমি দুঃখিত। যে পন্থায় আমি বিদেশে আসতে চেয়েছিলাম, তা আর সফল হচ্ছে না। মা, আমি বাবাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকেও। আমি মরে যাচ্ছি। কারণ, আমি শ্বাস নিতে পারছি না। ভালো থেকো তোমরা। মা, আমি দুঃখিত।’
লন্ডনে ওই লরি থেকে লাশগুলো উদ্ধারের এক দিন পর শারীরিক গঠন দেখে বলা হয়েছিল, নিহত ব্যক্তিরা চীনের নাগরিক। তবে পরে খবর বের হয়, নিহত ব্যক্তিদের অনেকেই ভিয়েতনামের নাগরিক। যুক্তরাজ্য সরকার নিহত ব্যক্তিদের লাশ শনাক্তের জন্য ভিয়েতনামের সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তবে লন্ডনে লরি ট্র্যাজেডিতে ভিয়েতনামের কোনো নাগরিক আছে কি না, তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি দেশটির সরকার।
তারা মাইয়ের পরিবারের সদস্যরা এখনো শোকে মুহ্যমান। তাঁর বাবা ফেম ভান থিন বলেছেন, ‘বার্তাটা পাওয়ার পর আমরা শোকে মুষড়ে পড়েছি। এটা খুবই বেদনাদায়ক।’ তিনি বলেন, লন্ডনযাত্রায় তাঁর মেয়ের মৃত্যু হতে পারে, এমনটা তাঁদের জানানো দরকার ছিল। কিন্তু তা জানানো হয়নি। মেয়ের যুক্তরাজ্যে যাওয়া বাবদ তিনি ও তাঁর স্ত্রীকে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে।
ফেম বলেন, ‘আমি আমার এক প্রিয়জন ও অর্থ—দুটো হারিয়েছি।’ তিনি বলেন, কীভাবে তাঁর মেয়েকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হবে, তা তাঁদের পরিবারকে জানায়নি মানব পাচারকারীরা।’ ফেম বলেন, তাঁর মেয়ে প্রথমে চীনে যান। এরপর সেখান থেকে ফ্রান্সে। এরপর তারা মাই ও তাঁর ৩৮ সঙ্গীকে তোলা হয় লরিতে। একপর্যায়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বদ্ধ লরিতে আটকা পড়ে অক্সিজেনের অভাবে তাঁদের সবাই মারা যেতে পারেন। তাঁর আশা, মেয়ের মরদেহ ভিয়েতনামে ফেরত পাঠাতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সাহায্য করবে।এদিকে, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে যুক্তরাজ্য থেকে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।