সার্সের করুণ পরিণতিকেও ছাড়াল করোনা

করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। ছবি: রয়টার্স

চীনজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছেই। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আজ শনিবার পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৭২২–এ পৌঁছেছে। এ হিসাবে এক দশক আগে চীন ও হংকংয়ে মহামারি আকার ধারণ করা সিভিয়ার অ্যাকুইটি রেসপিরেটরি সিনড্রোমে (সার্স) মৃত ব্যক্তির সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেল।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, চীনের স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে সবচেয়ে কঠিন অবস্থা হুবেই প্রদেশে। গত ডিসেম্বরে এখান থেকেই রোগটির উৎপত্তি। সেখানে গতকাল শুক্রবারই পাঁচজন মারা গেছেন।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, স্থানীয় সময় গতকাল সকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেবল চীনেই মারা যান ৬৩৬ জন। আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৩১ হাজার ১৬১ জন। আজ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৭২২–এ পৌঁছেছে।

করোনাভাইরাস নিয়ে দৈনিক হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশটির স্বাস্থ্য কমিশন নতুন করে আরও ৩ হাজার ৩৯৯ জন আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে মোট করোনা–আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০।

সার্সভাইরাসটির মতোই একই পরিবার থেকে এসেছে করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাস সাধারণ মানুষকে ঠান্ডাজনিত রোগে ভোগায়। ২০০২-০৩ সালের দিকে চীনের মূল ভূখণ্ড ও হংকংয়ে সার্সভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৬৫০ জনের মৃত্যু ঘটেছিল। বিশ্বজুড়ে আরও ১২০ জন ওই সময় মারা যান।

হুবেই ও এ প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ মানুষকে কার্যকরভাবে আটকে রাখার পরও চীন বর্তমান ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে লড়াই করেছে। কেন্দ্রস্থল থেকে দূরে থাকা অন্য শহরগুলোয় মানুষকে বাড়ির ভেতরে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং বাড়ির বাইরে যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিষয়ে অন্যদের প্রথম সতর্ক করার চেষ্টা করছিলেন চীনা চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মারা যাওয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শোক প্রকাশ করছেন এবং সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

২৪টি দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে বেশ কয়েকটি দেশকে চীন থেকে আগমন নিষিদ্ধ করার এবং তাদের নাগরিকদের চীন ভ্রমণ এড়াতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কেউ কেউ তাঁদের নাগরিকদের চীন ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রধান এয়ারলাইনগুলো চীন থেকে যাওয়া–আসার ফ্লাইট স্থগিত করেছে। করোনাভাইরাস দেশের বিমান চলাচলেও প্রভাব ফেলেছে। প্রতিদিনই যাত্রীসংখ্যা কমছে। তাই খরচ কমাতে বৃহদাকার উড়োজাহাজের পরিবর্তে ছোট উড়োজাহাজ দিয়ে যাত্রী বহন করছিল বিমান সংস্থাগুলো। কিন্তু তাতেও লোকসানের বোঝা কমাতে পারছিল না। তাই ফ্লাইটের সংখ্যা কমানোর কাজ শুরু করেছে সংস্থাগুলো।

জাপানের একটি প্রমোদতরির ৬১ জন যাত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। হাজারো যাত্রীকে দুই সপ্তাহের বেশি কোয়ারেন্টাইনে কাটাতে হচ্ছে।