শ্রীলঙ্কায় জ্বালানির দাম রেকর্ড বৃদ্ধি, জনগণকে বাড়িতে থেকে কাজ করার পরামর্শ

শ্রীলঙ্কায় তেল কিনতে জ্বালানি স্টেশনে মানুষের ভিড়ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

দেশে জ্বালানির ব্যবহার কমাতে বাড়ি থেকে কাজ করাকে উৎসাহ দেবে শ্রীলঙ্কা সরকার। আজ মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কায় জ্বালানির দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে দেশটির বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা বিজেসেকেরা এক টুইটার পোস্টে এমন আভাস দিয়েছেন। খবর রয়টার্স ও এএফপির।

মঙ্গলবার টুইটার পোস্টে কাঞ্চনা বলেন, পেট্রলের দাম ২০–৪০ শতাংশ বাড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের দামও ৩৫–৩৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ক্রমান্বয়ে সরকারি গণপরিবহন ও অন্যান্য সেবা খাতেও দাম বাড়ানো হবে। টুইটার পোস্টে কাঞ্চনা আরও লিখেছেন, ‘তেলের ব্যবহার কমাতে ও জ্বালানিসংকট মেটাতে বাড়ি থেকে কাজ করার বিষয়টিকে উৎসাহিত করা হবে।’

গতকাল সোমবার শ্রীলঙ্কা সরকারের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা মার্চে ২১ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল।

জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা আরও বলেন, গতকাল নিয়োগপ্রাপ্ত ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিপরিষদ’ জ্বালানির নতুন দাম নির্ধারণ করে। শ্রীলঙ্কায় গণপরিবহনগুলোতে সাধারণত ডিজেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ২৮৯ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ রুপি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৩৮ শতাংশ দাম বেড়েছে। পেট্রলের দামও লিটারপ্রতি ৩৩৮ থেকে বাড়িয়ে ৪২০ রুপি করা হয়েছে।

শ্রীলঙ্কায় এ নিয়ে গত ৬ মাসে ডিজেলের দাম ২৩০ শতাংশ ও পেট্রলের দাম ১৩৭ শতাংশ বাড়ল। দুটিরই সরবরাহজনিত ঘাটতি আছে। মোটরযান ব্যবহারকারীদের জ্বালানি সংগ্রহ করতে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়াতে হচ্ছে। জ্বালানি পেতে কয়েক দিন পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে।

গতকাল শ্রীলঙ্কার আদমশুমারির কার্যালয় বলছে, গত মাসে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি আগের বছরের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি আরও বেশি—৪৫ দশমিক ১ শতাংশ।

শ্রীলঙ্কায় পেট্রল কিনতে তিন চাকার যানের দীর্ঘ সারি
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

তবে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ স্টিভ হাঙ্কে বলেছেন, সরকারিভাবে শ্রীলঙ্কার মুদ্রাস্ফীতির যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, তার চেয়ে বাস্তবে মুদ্রাস্ফীতির হার অনেক বেশি। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ডেটা ও ক্রয়ক্ষমতার সমতা কৌশল ব্যবহার করে আমি যথাযথভাবে পরিমাপ করে দেখেছি যে আগের বছরের তুলনায় দেশটিতে ১২২ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে।’

স্টিভ হাঙ্কে এখানে মার্চের পরিসংখ্যান উল্লেখ করেছেন। অথচ শ্রীলঙ্কার সরকারি হিসাবে এ মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ২১ দশমিক ৫ শতাংশ।

গত মাসে শ্রীলঙ্কা সরকার ঘোষণা করে, তারা ৫ হাজার ১০০ কোটি পরিমাণ বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে দেশটির আলোচনা চলছে।

শ্রীলঙ্কায় স্থানীয় মুদ্রার মান ক্রমাগত কমেছে। মার্চে এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কার মুদ্রার মান দাঁড়ায় ২০০ রুপিতে। আর এখন প্রতি ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৩৬০ রুপিতে।

আরও পড়ুন

করোনা মহামারির ধাক্কার পাশাপাশি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তে দেশটি ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়েছে। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি। ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, চলছে বিদ্যুতের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকার প্রতিবাদে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভ সম্প্রতি সহিংস হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের সমর্থকেরা কলম্বোয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে কমপক্ষে ৯ জন নিহত ও ৩০০ জন আহত হন।

একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের নির্দেশে ৯ মে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। এরপর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রবীণ রাজনীতিক রনিল বিক্রমাসিংহেকে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট।

আরও পড়ুন