শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ভাসছেন ‘পানিতে’, রাজপ্রাসাদে বিক্ষোভকারীরা
জনরোষের শিকার হয়ে সরকারি বাসভবন থেকে পালিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে কোথায় আছেন, তা–ই এখন আলোচনায়। কোথায় আছেন, তা জানা না গেলেও এরই মধ্যে অজ্ঞাত স্থান থেকে বার্তা দিয়েছেন তিনি। গ্যাস ব্যবহার কমানোর জন্য বার্তা দেন।
গত শনিবার গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাড়িতে হামলা চালান বিক্ষোভকারীরা। এ সময় সেখানে ভাঙচুর চালানো হয়। যদিও ওই সময় প্রেসিডেন্ট তাঁর বাসভবনে ছিলেন না। আজ সোমবার পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বাসভবন।
গোতাবায়া এখন কোথায় আছেন, তা এখনো নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। তবে সরকারের শীর্ষ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল রোববার ভারতের এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, গোতাবায়াকে সেনাসদর দপ্তরে নেওয়া হয়েছে। আবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে খবরে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনীর একটি সূত্র কেবল এটুকু জানিয়েছে, গোতাবায়া এখন নৌবাহিনীর জাহাজে আছেন। তিনি শ্রীলঙ্কার জলসীমাতেই আছেন।
এর আগে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষেও বিক্ষোভের মুখে নৌবাহিনীর জাহাজে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে তিনি এখন ঠিক কোথায় আছেন, তা–ও অজানা। তবে বিবিসির খবর সঠিক হলে এটা বলা যায় যে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে পানিতে ভাসানো রাজাপক্ষে পরিবারই এখন ভাসছে পানিতে। সেই সঙ্গে ভয়ংকর অনিশ্চয়তায় ভাসছে শ্রীলঙ্কার ভবিষ্যৎ।
শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভ জোরালো হলে গত শনিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে। আর প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণে সরকার গঠনে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে এরপরও বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসবভনে অবস্থান করছেন। সেখানে সুইমিংপুলে গোসল করেছেন, প্রেসিডেন্টের সোফায় বসে আয়েশ করেছেন, রান্নাঘরে খাবার রান্না করে খাচ্ছেন। আরও কত কী ঘটাচ্ছেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, এই দুই নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে সরে না দাঁড়ানো পর্যন্ত দুই বাসভবন ছাড়বেন না তাঁরা।
এদিকে গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিতে ঢোকার পর সেখান থেকে লাখ লাখ রুপি খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। গতকাল অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ফুটেজে বিক্ষোভকারীদের গোতাবায়ার বাসভবন থেকে খুঁজে পাওয়া সেই রুপি গুনতে দেখা যায়।
শ্রীলঙ্কায় রিজার্ভ সংকট দেখা দেওয়ার পর জ্বালানি–সংকট দেখা দেয়। এ ছাড়া ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের সংকটও দেখা দেয় দেশটিতে। এর জেরে শ্রীলঙ্কাজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভ থেকে দাবি জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর মাহিন্দা রাজাপক্ষে গত মে মাসে পদত্যাগ করেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকেন।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পদত্যাগ করার পর একটি সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে দেশটির বিরোধী দলগুলো। শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক দলগুলো গতকাল বৈঠকে বসেছিল। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১৩ জুলাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পদত্যাগ করার পর সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।