রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার থেকে আপত্তি তুলে নিল মিয়ানমারের ছায়া সরকার
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) করা মামলার বিচারকার্যের ওপর থেকে আপত্তি তুলে নিয়েছে দেশটির ছায়া সরকার (জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্যের সরকার)। খবর রয়টার্সের।
ইতিপূর্বে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে এ বিচারকাজে প্রাথমিক আপত্তি জানিয়েছিলেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি। তবে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানে তাঁর সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে পরিস্থিতি বদলে যায়। এখন ছায়া সরকার ওই আপত্তি তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিল।
সেনা অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে গতকাল মঙ্গলবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী ছায়া সরকার। বিবৃতিতে মামলাটির বিচারকার্য থেকে আপত্তি তুলে নেওয়ার ওই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত রাজনীতিক, আইনপ্রণেতা ও জান্তাবিরোধী আন্দোলনকারীদের নিয়ে গঠিত হয় এ ছায়া সরকার।
ছায়া সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী যে নৃশংসতা চালিয়েছে, আইসিজের তরফে সেই বিষয়ের স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। এতে জান্তা সরকার এখন যেসব নৃশংস অপরাধ সংঘটিত করছে, সেগুলো বন্ধ হওয়ার পথ তৈরি হবে।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের নভেম্বরে আইসিজেতে মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এ আদালত অবস্থিত।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তাঁদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। জীবন বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
জাতিসংঘের তদন্তকারী দল বলেছে, গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়েই রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
মামলার পক্ষে আইসিজেতে ৫০০ পৃষ্ঠার স্মারক জমা দেয় গাম্বিয়া। একই সঙ্গে অভিযোগের পক্ষে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার সম্পূরক নথিপত্র যুক্ত করে দেশটি। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর জন্য মিয়ানমারের তৎকালীন সরকার কীভাবে দায়ী, তা এসব স্মারক ও নথিপত্রে তুলে ধরা হয়েছে।
অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দ্য হেগে এ মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন সু চি। ওই সময় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ছিলেন তিনি।
শুনানিতে সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। আপত্তি জানান ওই অভিযোগের তদন্ত ও বিচারে আইসিজের এখতিয়ার নিয়ে।
কিন্তু গত বছরের সেনা অভ্যুত্থানের পর সু চিকে আটক করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। কয়েকটি মামলায় সু চির বিচার চলছে। অভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্র ফেরানোর প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে মিয়ানমারে গঠন করা হয় ছায়া সরকার। এ সরকারে সু চি নিজেও রয়েছেন।
জান্তাবিরোধী এ সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছে। তাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেশ নমনীয় অবস্থান নিয়েছে এ সরকার। এরই অংশ হিসেবে ওই বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সু চির আপত্তি তুলে নিয়েছে তারা।
তবে মিয়ানমারের ছায়া সরকারের এমন অবস্থানের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি আইসিজে। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে রয়টার্সের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনিও সাড়া দেননি।