যেসব কারণে এত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়া আজ দুটি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। পিয়ংইয়ং থেকে ক্ষেপণাস্ত্র দুটি নিক্ষেপ করা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান—দুই দেশই এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে চার দফা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে দেশটি।
জাতিসংঘের ঘোষণা অনুসারে, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করতে পারবে না। এমন অস্ত্র পরীক্ষা করায় দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।
কিন্তু উত্তর কোরিয়া বরাবরই এ নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছে। এ ছাড়া দেশটির নেতা কিম জং–উন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করবেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক কার্নেগি এনডাউমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল পিসের বিশেষজ্ঞ অঙ্কিত পান্ডা বলেন, নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র–সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নিজেদের সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি ঠিকঠাক রাখতে সাধারণত উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে। তবে এর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বিষয়ও রয়েছে। দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। কিন্তু এ অস্ত্র পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এটা ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের ভাবনাটি একেবারে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে না।
অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি খাদ্যসংকটের মধ্যে পড়েছে উত্তর কোরিয়া। এর পেছনে রয়েছে নিজেদের প্রয়োগ করা অবরোধ। কারণ, করোনা মহামারির কারণে চীনের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিল দেশটি। যদিও অর্থনীতি ও রাজনৈতিক দিন বিবেচনায় উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন।
কিম জং–উন সম্প্রতি স্বীকার করেছেন, তাঁর দেশ জীবন-মরণ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে এরপরও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ সামরিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যাবেন তিনি।
এদিকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়ার যে আলোচনা চলছিল, তা থেমে গেছে। মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ আলোচনা থেমে গেছে। উপরন্তু চলতি মাসে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে দেশটির কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার ইওহা ওমেনস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পার্ক ওন-গন বলেন, হতে পারে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কড়া প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে আজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
এর আগে গত শুক্রবার স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো হয়েছে ট্রেন থেকে। এর কয়েক দিন আগে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। যদিও এ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করা কঠিন।
চলতি মাসে যেভাবে উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শুরু করেছে এবং এর জন্য যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অস্বাভাবিক। রাজনীতিতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রবণতা রয়েছে। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র মহড়ায় অসন্তোষ উত্তর কোরিয়া। এরও ইঙ্গিত হতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা।
এদিকে বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক শুরু হচ্ছে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি। এটি চীনের জন্য মর্যাদাপূর্ণ ও স্পর্শকাতর একটি আয়োজন। এর আগে এমন ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হলো। এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোরিয়া রিস্ক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চাদ ও’ক্যারল বলেন, ‘আমার ধারণা, অলিম্পিক শুরুর দোরগোড়ায় এসে এমন অস্ত্রের পরীক্ষাকে স্বাগত জানাবে না চীন। এটা যদি একের পর এক ঘটতেই থাকে, তবে আমাদের এটা ভাবা অনুচিত হবে না যে চীন এমন কিছু করছে, যাতে উত্তর কোরিয়া সন্তুষ্ট নয়।’
কিন্তু অঙ্কিত পান্ডা অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি বলেন, চীন যদি এ পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট হয়, তাদের অবস্থান জানিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা হয়তো এটা জানিয়ে দেবে, এই পারমাণবিক অস্ত্র বা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। একে ‘চায়নাস রেড লাইনস’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
ইওহা ওমেনস ইউনিভার্সিটির আরেক শিক্ষক লেইফ-এরিক এসলে বলেন, সম্প্রতি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, চীনের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্য আবার শুরু হচ্ছে। ঠিক এই সময়ে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে এই ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, উত্তর কোরিয়ার এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে চীন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এ ছাড়া দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামরিক খাতেও সহযোগিতা করছে চীন। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে এই ইঙ্গিতও দেওয়া হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে শান্ত থাকবে না উত্তর কোরিয়া। এ ছাড়া চীন যে সাহায্য পাঠিয়েছে, তারও ইঙ্গিত হতে পারে এ পদক্ষেপ।
*(বিবিসি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ)