মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠা সরাচ্ছে ফেসবুক
রাখাইনে গণহত্যা, বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য এবং ভুল তথ্য ছড়ানো ঠেকাতে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার পৃষ্ঠা এবং একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট সরিয়ে ফেলছে ফেসবুক। সোমবার ফেসবুকের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। পর্যালোচনার পরই এ ব্যবস্থা নিয়েছে ফেসবুক।
মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটনের অভিযোগে দেশটির সেনাপ্রধান ও অপর পাঁচ শীর্ষ সেনা কমান্ডারকে বিচারের মুখোমুখি করতে জাতিসংঘের তদন্তকারীদের আহ্বানের পরই ফেসবুকের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হলো।
বিবৃতিতে ফেসবুক জানিয়েছে, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইংসহ ২০ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ফেসবুকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উত্তেজনা যেন আর বৃদ্ধি না পায়, এ পদক্ষেপ সে জন্যই নেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘চলতি বছরের শুরু থেকেই মানবাধিকার বিবেচনা করে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। অনেক মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করায় এটা আমাদের বিশাল দায়িত্ব। ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
একই অভিযোগে ইনস্টাগ্রামও মিয়ানমারের একটি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে এবং ৫২টি ফেসবুক পেজ বন্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ হওয়ায় পেজগুলোর মধ্যে ৪৬টি ও অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে ১২টি অ্যাকাউন্ট মিয়ানমারে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসংঘ-সমর্থিত ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, উত্তর রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার জন্য সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইংসহ দেশটির শীর্ষস্থানীয় জেনারেলদের অবশ্যই তদন্তের আওতায় এনে বিচার করা উচিত। রাখাইন, কাচিন, শান রাজ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জন্য একই পদক্ষেপ চেয়েছে মিশন।
কথিত বিদ্রোহী দমনের নামে গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নৃশংস অভিযান শুরু করে মিয়ানমার। এই অভিযানের মুখে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
সেনা ও নজরদারিতে থাকা লোকজনের বিরুদ্ধে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অস্ত্র ছাড়া রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণের কথা বারবার অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, তারা রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাব দিচ্ছে মাত্র। তবে আজ জাতিসংঘ মিশনের প্রতিবেদন ভিন্ন কথা বলেছ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ২০১৭ সালের মার্চে এই মিশন গঠন করে। মিশনের প্রতিবেদনে এই বলে উপসংহার টানা হয়েছে যে, তদন্তের যৌক্তিকতা ও শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য যথেষ্ট তথ্য রয়েছে। তথ্যসূত্র: সিএনএন ও এএফপি।