মিয়ানমারের ২৬ বছর বয়সী নারী খাইন মার নিউ একজন গার্মেন্টস-কর্মী। তাঁর সন্তান আছে। ইয়াঙ্গুনে পোশাক তৈরির একটি কারখানায় কাজ করে তাঁর দিন যাচ্ছিল। কিন্তু সবকিছু বদলে যায় গত ১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চির সরকার উৎখাতের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নেয়। এই ঘটনার পর থেকে দেশটিতে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে টানা বিক্ষোভ করছেন নানা শ্রেণি-পেশার গণতন্ত্রপন্থী জনতা। এই দলে খাইনও আছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গণতন্ত্রের দাবিতে খাইন প্রায় এক মাস ধরে তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। মিয়ানমারে পুনরায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছেন।
মিয়ানমারে চলমান বিক্ষোভে অংশ নিয়ে ইতিমধ্যে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে নারীরাও আছেন। এমনকি প্রথম যিনি নিহত হয়েছেন, তিনি ছিলেন একজন নারী।
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের পরিমাণ দিন দিন বাড়িয়ে চলছে। বাড়াচ্ছে দমনপীড়ন। এখন পর্যন্ত এই বিক্ষোভে ৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি। হুমকি-ধমকি, জেল-জুলুমের আশঙ্কা, প্রাণহানির ঝুঁকি সত্ত্বেও খাইন তাঁর অবস্থানে অনড়। গণতন্ত্রের দাবিতে প্রতিবাদ জানাতে পিছপা হবেন না বলে জানালেন তিনি।
খাইন ইয়াঙ্গুনে যে কারখানায় কাজ করে আসছিলেন, সেটি পশ্চিমা ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করে। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর তাঁর পেশাগত ক্ষেত্র অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। অন্যদিকে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় তাঁর জীবনের নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে। তবে খাইন বললেন, তিনি এসব নিয়ে চিন্তিত নন। তাঁর মতে, নারীদের অবশ্যই মিয়ানমারে চলমান এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে খাইন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘পুরুষের সঙ্গে আমাদের সমান দায়িত্ব রয়েছে। আমরা পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি।’
এদিন ইয়াঙ্গুনে একটি প্রতিবাদী সমাবেশে অংশ নিচ্ছিলেন খাইন। শূন্যে তিন আঙুল তুলে ধরে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের প্রতীক প্রদর্শন করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো ভয় নেই।’
গার্মেন্টসকর্মীদের একটি সংগঠনের নেত্রী খাইন। তিনি জানালেন, যে প্রতিকূল পরিবেশে তিনি কাজ করেছেন, সেই পরিস্থিতিই তাঁকে নিজেদের অধিকারের পক্ষে লড়াই করার গুরুত্ব শিখিয়েছে।
জান্তাবিরোধী আন্দোলনে নিহত নারীদের কথা স্মরণ করেন খাইন। তিনি জানান, তিনি তাঁদের শহীদ নারীদের জন্য গর্বিত। খাইন বলেন, ‘শহীদ নারীদের হয়ে আমরা নিরলস সংগ্রামের প্রতিজ্ঞা করেছি। যতক্ষণ প্রাণ আছে, ততক্ষণ লড়াই করব।’