মিয়ানমারে ধর্মঘট ডেকেছে ট্রেড ইউনিয়ন
মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ ট্রেড ইউনিয়নগুলো দেশটিতে আজ সোমবার ধর্মঘট ডেকেছে। দেশটির সেনাশাসকদের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে তারা এই কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে। ধর্মঘট, বিক্ষোভসহ নানা প্রতিবাদী কর্মসূচি চলা সত্ত্বেও দেশটির গণতন্ত্রপন্থীদের বিরুদ্ধে দমন–পীড়ন আরও জোরদার করেছে সামরিক কর্তৃপক্ষ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গতকাল রোববার রাতে দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন এলাকায় গুলি ও গ্রেনেডের শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গতকাল ইয়াঙ্গুনে অন্তত তিনজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
মিয়ানমারে পুলিশি হেফাজতে মারা গেছেন দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতা খিন মং লাত। গতকাল পরিবারের কাছে তাঁর মরদেহ হস্তান্তর করে নিরাপত্তা বাহিনী। তার আগের দিন শনিবার রাতে ইয়াঙ্গুনের পেবেডান জেলা থেকে খিন মং লাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। হেফাজতে নির্যাতনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ ও সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি।
আজ এক বিবৃতিতে সেনা বাহিনী জানিয়েছে, তারা আগের দিন মোট ৪১ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।
দেশটির রাষ্ট্র-পরিচালিত একটি সংবাদপত্রে আজ সেনাবাহিনীর একটি ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতাদের একটি কমিটির পক্ষে যে বা যারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলা হয়েছে, সামরিক আইন বলবতের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনী হাসপাতাল ও ইউনিভার্সিটিতে তাদের উপস্থিতি বজায় রাখবে।
কৃষি, নির্মাণ, উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাতের কমপক্ষে নয়টি ট্রেড ইউনিয়ন মিয়ানমারের সব জনসাধারণকে কাজ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধিতা ও অং সান সু চির নির্বাচিত সরকার পুনর্বহালের দাবিতে তারা এই ধর্মঘটের কর্মসূচি আহ্বান করেছে।
ট্রেড ইউনিয়নগুলো এক বিবৃতিতে বলেছে, ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার অর্থ হলো বর্তমান সামরিক সরকারকে সহায়তা করা।
ট্রেড ইউনিয়নগুলোর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের গণতন্ত্র রক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়।’
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দেশটির নারীদের বিভিন্ন সংগঠন লুঙ্গি আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।
মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভের অন্যতম নেতা মং সাউংখা ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে দেশটির নারীদের আজ সাহসের সঙ্গে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
লুঙ্গি আন্দোলনের আরেক সংগঠক নাই চি মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নারীদের ‘বিপ্লবী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তাঁদের লোকজন নিরস্ত্র, তবে জ্ঞানী। সেনাবাহিনী ভয় দেখিয়ে শাসন করার চেষ্টা করছে। আর তাঁরা লড়াই করবেন।
মিয়ানমারের বিভিন্ন শহর-নগরে গতকালও বিক্ষোভ হয়। ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার করে। ছোড়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল।
পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স বলছে, গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৮০০ মানুষকে গ্রেপ্তার বা আটক করেছে সামরিক জান্তা।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, মিয়ানমারে বিক্ষোভ দমাতে এখন পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে দেশটির পুলিশ ও সেনাবাহিনী।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান হয়। এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। সেনাবাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে। একই সঙ্গে সু চিসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে সেনাবাহিনী।