মালয়েশিয়ায় শৃঙ্খলা ফেরানোর শেষ সুযোগ আসছে নির্বাচনে: মাহাথির

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচন হবে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার শেষ সুযোগ। একই সঙ্গে তিনি বর্তমান সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। মালয়েশিয়ায় এখন ক্ষমতায় উমনো পার্টি। একসময় এ দল থেকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহাথির।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক দৈনিক দ্য স্ট্রেইট টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ক্যাপচারিং হোপ: দ্য স্ট্রাগল কনটিনিউস ফর আ নিউ মালয়েশিয়া’ নামে মাহাথির মোহাম্মদের একটি স্মৃতিচারণমূলক বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মোড়ক উন্মোচন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মাহাথির মোহাম্মদ এসব কথা বলেন।

২০২৩ সালে মালয়েশিয়ায় জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু আগামী বছরের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হবে বলে আশা করছেন ৯৬ বছর বয়সী বিশিষ্ট রাজনীতিক।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নিরবচ্ছিন্নভাবে ছয় দশক মালয়েশিয়া শাসন করেছে উমনো। ওই নির্বাচনে মাহাথির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট পাকাতান হারাপানের কাছে উমনো পরাজিত হয়। তবে দলত্যাগের কারণে ২০২০ সালে মার্চে ক্ষমতাসীন জোটের অংশ হয়ে উমনো পার্টি আবার শাসনক্ষমতায় ফিরে আসে। মুহিদ্দিন ইয়াসিনের ওপর থেকে উমনোর ১৫ সাংসদ সমর্থন তুলে নিলে আগস্টে উমনোর ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন।

মাহাথির মোহাম্মদের অভিযোগ, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের নিয়ে যদি পরবর্তী সরকার গঠন করা হয়, তাহলে দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ের অবসান ঘটবে। কারণ, দুর্নীতিবাজ সরকার দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, ‘এ কারণেই আসন্ন নির্বাচন মালয়েশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের হাতে এটাই শেষ সুযোগ। যদি আপনি এ সুযোগ নিতে না পারেন, তাহলে চিরতরে আপনারা খারাপ সরকার পেতে যাচ্ছেন।’

মাহাথির বইটিতে পাকাতান হারাপান সরকারের উত্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া ঘটনাগুলো তুলে ধরেছেন। ২০১৮ সালের মে মাসে দলটি ক্ষমতায় আসে। ১৫ বছর পর ৯২ বছর বয়সে আবার প্রধানমন্ত্রী হন মাহাথির। তবে নানা রকম চ্যালেঞ্জের মুখে ২০২০ সালের মার্চে এর পতন ঘটে। পদত্যাগে বাধ্য হন মাহাথির মোহাম্মদ।

সমালোচকদের মতে, মাহাথির মোহাম্মদ যদি জোট সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পাকাতান হারাপান সরকারের প্রধানের পদটি জোট শরিক দল পার্টি কেদিলান রাকয়াতের সভাপতি আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে হস্তান্তর করতেন, তবে উমনো পার্টি আবার সরকারে চালকের আসনে ফিরে আসতে পারত না।

আনোয়ার ইব্রাহিমকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন মাহাথির মোহাম্মদ। পদত্যাগ করে তিনি দুই দিকের দলগুলোকে নিয়ে একটি জোট সরকার গঠন ও তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। তবে সরকার গঠনে মাহাথির মোহাম্মদের ওই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

বইয়ে মাহাথির পাকাতান হারাপান জোট থেকে তাঁর দল পার্টি প্রিবুমি বেরসাতু বের হয়ে যাওয়ার পর নিজের আচমকা পদত্যাগের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তারই একসময়ের মিত্র মুহিদ্দিনের সমর্থন প্রত্যাহারের ঘটনার পর পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় পাকাতান হারাপান। এরপর মুহিদ্দিন ইয়াসিন প্রধানমন্ত্রী হন।