‘মহাবিপর্যয়ের’ মুখে আফগানিস্তান, অর্থ ছাড়ার অনুরোধ জাতিসংঘের
আফগানিস্তানের আর্থসামাজিক কাঠামো পুরোপুরি ধসে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। এই পরিস্থিতি এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দেশটিতে অর্থের প্রবাহ চালু করার উপায় বের করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান না হলে দেশটির প্রায় ৯৭ শতাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে।
গত ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর দেশটিতে অর্থপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের প্রায় এক হাজার কোটি ডলার আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে জরুরি সহায়তা তহবিলের ৪৪ কোটি ডলারও আটকে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
আফগানিস্তান সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ডেবোরাহ লিওনস বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আফগানিস্তানে অর্থপ্রবাহ চালু করার একটি উপায় বের করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ সময় ডেবোরাহ লিওনস বলেন, দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা ‘পুরোপুরি ভেঙে পড়া ঠেকাতে’ এটা খুবই জরুরি। তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তান বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে, এর মধ্যে রয়েছে মুদ্রার অব্যাহত দরপতন, খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বেসরকারি ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত তহবিলও নেই কর্তৃপক্ষের হাতে।
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে লিওনস বলেন, কয়েক মাস আফগানিস্তানের অর্থনীতি সচল রাখার সুযোগ দেওয়া উচিত। তালেবান আরও নমনীয় হয় কি না এবং মানবাধিকার রক্ষা, লৈঙ্গিক সমতা ও সন্ত্রাস দমন বিষয়ে আগের চেয়ে ভিন্নভাবে আচরণ করে কি না, তা দেখার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
এত দিন আফগান সরকারের ব্যয়ের ৭৫ শতাংশই বহন করত যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন দাতারা। ২০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পরে সেই সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক জেরেফি দে লরেন্তিস নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, ‘তালেবান এখন আন্তর্জাতিকভাবে বৈধতা ও সাহায্য চাইছে। আমরা তাদের স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, যেকোনো বৈধতা ও সাহায্য অর্জন করে নিতে হবে।’
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা এবং এ থেকে বিরত থাকতে তালেবানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। একই সঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তালেবানের সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে অতিশয় ভোগান্তির মুখে পড়া লোকজনের প্রতি আমাদের সংহতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া।’
আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ৮০ লাখ, যার মধ্যে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ প্রতিদিনই মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে পড়ায় দেশটি চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে ইউএনডিপি।
এদিকে আফগানিস্তানে সব পক্ষের অংশগ্রহণে সরকার গঠনের আগপর্যন্ত দেশটির কোনো সরকারকে স্বীকৃতি না দিতে নিরাপত্তা পরিষদকে অনুরোধ করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত গোলাম ইসাকজাই।
গত মঙ্গলবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করে তালেবান। নতুন সরকারে কোনো নারী প্রতিনিধি নেই। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ সরকার ঘোষণার আগে তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছিলেন, সব পক্ষের অংশগ্রহণেই সরকার গঠন করবেন তাঁরা।
ডেবোরাহ লিওনস বলেছেন, সাবেক আফগান কর্মকর্তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরেও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডের ‘সুস্পষ্ট অভিযোগ’ রয়েছে তালেবানের বিরুদ্ধে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে তালেবানের ক্রমবর্ধমান সহিংস প্রতিক্রিয়া, যার মধ্যে গুলি করে কয়েকজনকে হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ বলেছে, যেসব সাংবাদিক নিজেদের কাজ করছিলেন, তাঁদেরও লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। এর আগে তালেবান সদস্যদের হাতে সাংবাদিক নিপীড়নের ছবি গণমাধ্যমে আসে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘আমরা তালেবানের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে শক্তির প্রয়োগ এবং নির্বিচার আটক বন্ধ করুন।’