ভিন্নমত দমনে সৌদিতে গোপন আদালত
সন্ত্রাসবাদীদের বিচারের নামে গোপনে বিশেষ আদালত বসিয়ে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করছে সৌদি আরব। সৌদি রাজপরিবারের একচ্ছত্র আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা মানবাধিকারকর্মী বা ভিন্নমত প্রকাশকারীদের সেই আদালতে কৌশলে সাজা দেওয়া হচ্ছে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত পাঁচ বছরে রিয়াদের এই বিশেষায়িত অপরাধ আদালতের (এসসিসি) ৯৫টি মামলা তদন্ত করেছে। ওই তদন্তের ভিত্তিতে গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি বলেছে, সমালোচনা বন্ধ করতে নিয়মিতভাবে এই আদালতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি বলছে, ২০১১ সাল থেকে ওই আদালতের (এসসিসি) অনায্য বিচারে ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এমনকি মৃত্যুদণ্ড দিতে অস্পষ্ট সন্ত্রাসবাদবিরোধী ও সাইবার ক্রাইমবিরোধী আইনকে ব্যবহার করা হয়েছে। আর এর শিকার হয়েছেন দেশের মানবাধিকারকর্মী, লেখক, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা, সংস্কারবাদী এবং রাজনৈতিক কর্মী বিশেষ করে দেশটির শিয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা। অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক হেবা মোরায়েফ বলেন, এসসিসির বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ অস্পষ্ট। সেখানে প্রতি পদে মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনজীবী নিয়োগ দিতে না দেওয়া, কারাবন্দী অবস্থায় কারও সঙ্গেই দেখা করতে না দেওয়া এবং সর্বোপরি কেবল নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে দণ্ড দেওয়া হতো।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা স্বীকারোক্তির ওপর আদালতটি ব্যাপকভাবে নির্ভর করেছে। এভাবে অন্তত ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। সৌদি আরবের শিয়া–অধ্যুষিত অস্থির অঞ্চল কাতিফের আন্দোলনকর্মী হুসেইন আল-রাবি গণবিচারের শিকার হয়েছিলেন। কেবল স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং ২০১৯ সালে তা কার্যকর করা হয়।
২০১৭ সালে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় বসার পর থেকে সৌদি আরবে একের পর এক ব্যাপক বিস্তৃত সামাজিক সংস্কার করা হলেও ওই পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশটি ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়নও চালিয়ে যাচ্ছে।
খবর গার্ডিয়ানের।