‘ভাবতে পারিনি হামলা চালাবে, যুক্তরাষ্ট্র ছিল অনেক দূরে’

৯/১১ সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যু হয়েছিল প্রায় তিন হাজার মানুষের
ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ছিনতাই করা উড়োজাহাজ যখন বিধ্বস্ত হয়, তখন আফগানরা নিজেদের আল-কায়েদা দুঃখের জালে আটকা। আল-কায়েদার সদস্যরা দুই দিন আগেই পানশির ভ্যালিতে আফগানিস্তানের নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শাহ মাসুদকে হত্যা করে। সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একজন শক্তিশালী সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

আফগানরা যখন শোকে আচ্ছন্ন, তখন যুক্তরাষ্ট্র ঘিরে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলো নাটকীয়ভাবে আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করে দেয়। কিন্তু কারও কারও কাছে এই ঘটনার তাৎপর্য অনেক।

আফগানিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আবদুল রহমান বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ওই দিন সন্ধ্যায় খবরটি শুনি। যুক্তরাষ্ট্রে হামলা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আমি গুরুত্ব দিইনি। কারণ, রেডিওতে প্রায়ই হামলা ও যুদ্ধের খবর শোনা যেত।’

আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা
রয়টার্স ফাইল ছবি

পরের দিনগুলোতে আফগানরা জেনে গিয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্রে হামলাকারী আল-কায়েদার সদস্যরা তাদের এলাকাতেই লুকিয়ে রয়েছে। তাদের তালেবান নেতারা আল-কায়েদা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিয়েছে। অনেকেই বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁদের দুনিয়া বদলে যেতে চলেছে।

আবদুল রহমান বলেন, ‘প্রতিশোধ নিতে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা চালাবে, তা ভাবতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম আমেরিকা অনেক দূরে।’

কান্দাহারের এক লাইব্রেরির দায়িত্ব পালন করা আবদুল সামাদ স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘একটি সংবাদপত্রের স্ট্যান্ড ঘিরে লোকজনের জটলা ছিল। পত্রিকার পাতাজুড়ে টুইন টাওয়ারে হামলার ছবি ছাপা হয়েছিল। ওই ঘটনার দুই দিন পার হয়ে গিয়েছিল। এটা ছিল অগ্রহণযোগ্য একটি কাজের সূত্রপাত।’

সামাদ এএফপিকে বলেন, ‘তারা আফগানিস্তানে আসার একটি অজুহাত খুঁজছিল। এই হামলা আফগানিস্তানের মাটি দখল করার সেই অজুহাত যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিল।’

তালেবান যখন আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল, তখন যুক্তরাষ্ট্র তার কঠিন রূপ দেখাল।


কান্দাহারের তালা মেরামতকারী কিয়ামউদ্দিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণে আফগানিস্তান ঘিরে চলতে থাকা দীর্ঘদিনের সংঘর্ষের অবসানের স্বপ্ন দ্রুতই উবে যায়। তারা এখানে এসে আরও বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে তোলে।

আল-কায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলতে থাকায় তালেবান পুনরুজ্জীবিত হয়। বিদেশি সেনাদের বিরুদ্ধে আফগান ধর্ম ও ঐতিহ্যকে অসম্মান করার অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এতে বেসামরিক লোকজনের মৃত্যু বাড়তে থাকে।

কিয়ামউদ্দিন বলেন, মানুষ আশাবাদী হয়ে ওঠে। অনেক শরণার্থী পাকিস্তান ও ইরান থেকে ফিরে আসতে শুরু করে। তারা বুঝতে পারেনি যে আরও বড় সমস্যার মুখে পড়তে হবে।

শিক্ষক নুরুল্লাহ এএফপিকে বলেন, প্রতিবেশীর বাড়ির নিচতলায় লুকানো টিভিতে ওই হামলার খবর শুনেছিলাম। তালেবান টেলিভিশন নিষিদ্ধ করেছিল। ওই দৃশ্য ছিল বীভৎস। ওই আগুনের ছবি বারবার দেখানো হচ্ছিল।

তালেবানকে উৎখাতের পর সাময়িকভাবে শান্তি ফিরে এসেছিল। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। নুরুল্লাহ বলেন, তালেবান যখন উৎখাত হয়েছিল, অনেকেই খুশি হয়েছিল। তারা স্বাধীনভাবে শ্বাস নিতে পেরেছিল। কিন্তু সময় যত গড়াতে থাকে, ততই মনে হতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র ভুল জায়গায় এসেছে। এটা তাদের জন্য একটি ফাঁদ।

অস্ত্র হাতে তালেবান সদস্যরা
ফাইল ছবি: এএফপি

শিক্ষক নুরুল্লাহ আরও বলেন, ‘ওই হামলার ২০ বছর পর এসেও মনে হচ্ছে আমার ধারণাই ঠিক। তালেবান আবার ফিরে এসেছে। একই মানুষ, একই চেহারা আর আচরণ নিয়ে আবার ক্ষমতায়।’