পাকিস্তানে পার্লামেন্ট পুনর্বহালের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর উল্লাসে মেতেছে ইমরানবিরোধী শিবির। একে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে দেখছে তারা। আজ শুক্রবার দোয়া মাহফিল ও শুকরিয়া সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিজয় উদ্যাপনের ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দলগুলো। খবর জিয়ো নিউজের
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করেছেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। পাঁচ দিনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এ রায় দেন। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপরও ভোটাভুটি হবে। এ জন্য কাল শনিবার দিন ধার্য করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত আরও বলেন, অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহা না করা অবধি পার্লামেন্টের অধিবেশন মুলতবি করা যাবে না।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আনন্দ প্রকাশ করে টুইটারে পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো লিখেছেন, ‘গণতন্ত্রই শ্রেষ্ঠ প্রতিশোধ! জিও ভুট্টো, জিও আওয়াম, পাকিস্তান জিন্দাবাদ।’
জাতীয় পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শীর্ষ আদালতের এ রায় গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। তিনি আরও বলেন, এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সংবিধান ও পাকিস্তানের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়েছে। আদালতের স্বাতন্ত্র্য ও মর্যাদা সমুন্নত থেকেছে।
পার্লামেন্ট ও এর সার্বভৌমত্বকে দৃঢ় করতে সর্বসম্মতক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শীর্ষ আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শাহবাজ শরিফ। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন জনগণের জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক লড়াই লড়ব।’
জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলামের (জেইউআই) নেতা ফজলুর রহমানের সঙ্গে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনটি করেন শাহবাজ। ওই সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেওয়া হয়, আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে আজ ইয়ুম-ই-তাশাকুর বা শুকরিয়া সমাবেশ করা হবে।
শাহবাজ বলেন, ‘আমি গোটা জাতিকে অভিনন্দন জানাই। এটি প্রত্যেক পাকিস্তানি নাগরিকের বিজয়। একই সঙ্গে এটি সংবিধান, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগেরও বিজয়।’
সম্মেলনে জেইউআই নেতা ফজলুর রহমান বলেন, আজ দেশব্যাপী সমাবেশ পালন করা হবে। তিনি বলেন, ‘এ বিজয় উদ্যাপনের জন্য আজ আমরা ‘ইয়ুম ই তাশাকুর’ পালন করব। চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের হয়ে আসতে আমরা আমাদের দেশের জন্য দোয়া করব।’
আদালতের সিদ্ধান্তের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পিএমএল-এন নেতা খুররাম দস্তগীরও। তাঁর মতে, আদালতের এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের মর্যাদা বজায় থেকেছে। খুররাম বলেন, সংবিধান কেবলই একটি কাগজের টুকরা নয়।
৩ এপ্রিল ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী ইমরানের পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
এ প্রক্রিয়াকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের দিনই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ দেন। গতকাল পার্লামেন্ট পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই প্রধানমন্ত্রীর। এ-সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হলো।