বিরোধীদের একতরফা ঘোষণা, পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ

শাহবাজ শরিফ
ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন অশান্ত হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে হটাতে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি নাকচ করে দিয়েছেন।

এদিকে জাতীয় পরিষদ (পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ) ভেঙে দিয়ে একটি দাপ্তরিক নোটিশ জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, পিএমএল-এনের নির্বাসিত প্রতিষ্ঠাতা নওয়াজ শরিফ ঠিক এটাই চেয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী ইমরানের সুপারিশে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এর পর থেকেই দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠেছে। বিরোধীরা আইনসভার অধিবেশন পুনরায় শুরু করেছেন। তাঁরা ডেপুটি স্পিকারের অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করার পাশাপাশি শাহবাজ শরিফকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একতরফা ঘোষণা দিয়েছেন।

শাহবাজ শরিফ সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই। ‘নতুন প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে আইনসভায় এরই মধ্যে ভাষণও দিয়েছেন শাহবাজ।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা শেরি রেহমান একটি ভিডিও টুইট করেছেন। তাতে তিনি দাবি করেছেন, ১৯৭ জন সদস্য পিএমএল-এনের সাংসদ আয়াজ সাদিককে নতুন স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।

সাদিক স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ইমরান খানের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব চালু করেন। পার্লামেন্টে ইমরান খানের শাসক জোটের সদস্যদের অনুপস্থিতিতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে রায় দিয়েছেন বিরোধীদলীয় সাংসদেরা।

২৫ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি হওয়ার পর পার্লামেন্টের অধিবেশন পুনরায় আহ্বান করার ক্ষেত্রে এটি একটি প্রতিবাদী পদক্ষেপ বিরোধীদের। নিয়মানুসারে, স্থগিত হওয়া অধিবেশন কেবল প্রেসিডেন্ট বা স্পিকার ডাকতে পারেন।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়, দিনের শুরুতে ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে বলেন, এটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫-এর বিরোধী। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫-এ বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক দায়িত্ব রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা। সংবিধান ও আইনের প্রতি আনুগত্য প্রত্যেক নাগরিকের জন্য অলঙ্ঘনীয়ভাবে বাধ্যতামূলক; তিনি যেখানেই থাকুন এবং পাকিস্তানে অবস্থান করার সময় প্রত্যেকের জন্যই তা প্রযোজ্য।

এদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জাতীয় পরিষদে ঘটা ঘটনাগুলোতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখার প্রধান মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার রয়টার্সকে বলেছেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সম্পর্ক নেই।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
ছবি: রয়টার্স

শাহবাজ শরিফ, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিসহ বিরোধী নেতারা ডেপুটি স্পিকারের পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক আখ্যায়িত করেছেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন তাঁরা।
পাকিস্তানের সংবিধানের ২২৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, পার্লামেন্ট ভেঙে যাওয়ার পর এখন প্রেসিডেন্ট একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন।

ভারতের ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়, আজ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকটের জেরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট নোটিশ জারি করে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সব রেকর্ড তলব করেছেন। এ নিয়ে বিরোধীদের আবেদনের শুনানি আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বিরোধীদের আক্রমণ করে বলেছেন, তাঁরা চোখের পানি ফেলছেন। বিরোধীদের আগাম নির্বাচন থেকে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের হাতে এখন কঠিন কাজ। দেশে জরুরি অবস্থা জারি বা সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের মতো বিকল্প পথ খোলা রয়েছে। তবে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিলে ইমরানের সমর্থন বাড়বে।