বাড়ি পালানো সৌদি তরুণীর কাণ্ড!
পরিবারের অতিমাত্রার রক্ষণশীলতা থেকে পালাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন সৌদি এক তরুণী। তাঁর দাবি, বাড়ি ফিরলে তাঁকে মেরে ফেলা হবে। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে হোটেল কক্ষে নিজেকে আটকে রেখেছেন তিনি। একদিকে থাই কর্তৃপক্ষ তাঁকে ফেরত পাঠাতে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাঁড়িয়েছে তরুণীর পক্ষে। সংগঠনগুলোর মতে, সৌদি আরবের সঙ্গে আঁতাত করে থাই কর্তৃপক্ষ তরুণীকে পরিবারের কাছে ফেরত পাঠিয়ে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, ওই সৌদি তরুণীর নাম রাহাফ মোহাম্মেদ আল-কুন। বয়স ১৮ বছর। তিনি কুয়েত থেকে থাইল্যান্ড হয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। রাহাফ জানিয়েছেন, তিনি পরিবার থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন।
ফিরতি টিকিট নেই উল্লেখ করে কুয়েতে ফেরত পাঠানোর জন্য থাই কর্তৃপক্ষ সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকায় একটি হোটেলের কক্ষে রাখে রাহাফকে। তবে ফেরত পাঠানোর জন্য রাহাফকে হোটেল কক্ষ থেকে আনতে গিয়ে বিপত্তিতে পড়ে থাই কর্তৃপক্ষ। ওই তরুণী দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিজেকে হোটেল কক্ষে আটকে রেখেছেন। একটি ছবিতে দেখা গেছে, হোটেল কক্ষের দরজার সামনে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিছানার ম্যাট, টেবিল, চেয়ার দিয়ে রেখেছেন রাহাফ। আর তাঁকে কুয়েতের ফিরতি ফ্লাইটে তুলে দেওয়ার জন্য দরজার বাইরে কর্মকর্তারা অপেক্ষা করছেন।
সপ্তাহজুড়ে রাহাফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর ছবি পোস্ট করে সবার নজর কাড়েন। তিনি বলেছেন, তাঁর অস্ট্রেলিয়ার ভিসা রয়েছে। কিন্তু সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে তাঁর পাসপোর্ট একজন সৌদি কূটনীতিক কেড়ে নিয়ে গেছেন।
এদিকে সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই তরুণীর পাসপোর্ট থাকলেও ফিরতি টিকিট না থাকায় তাঁকে আটক করা হয়েছে।
রাহাফ বিবিসিকে বলেছেন, তিনি ভয় পাচ্ছেন যে তাঁকে জোর করে সৌদি আরবে ফেরত পাঠানো হবে এবং তাঁর পরিবার তাঁকে হত্যা করবে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপপরিচালক মাইকেল পেজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, পরিবার থেকে পালিয়ে বেড়ানো সৌদি নারীকে ফেরত পাঠানো হলে স্বজনদের হাতে তিনি ভয়াবহ সহিংসতার শিকার হতে পারেন। তাঁর স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে।
ব্যাংককে সৌদি দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই তরুণীকে বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে, ‘কারণ তাঁর ফিরতি টিকিট নেই’ এবং তাঁকে আজ কুয়েতে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কুয়েতে তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য বসবাস করে। সৌদি আরব তাঁকে বিমানবন্দরে বা অন্য কোথাও আটকে রাখার কর্তৃপক্ষ নয় এখানে। সৌদি কর্মকর্তারা তরুণীর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
তবে তরুণীর পালিয়ে আসাকে ‘পারিবারিক সমস্যা’ বলে মন্তব্য করেছেন থাই পুলিশ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সুরাচাতে হাকপার্ন। বিবিসিকে তিনি বলেন, রাহাফ বিয়ে থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। থাইল্যান্ডে প্রবেশে তাঁর কোনো ভিসা ছিল না। পুলিশ তাঁকে ঢুকতে দিতে বাধা দেয় এবং যে ফ্লাইটে করে তিনি এসেছেন, সেই ফ্লাইটে তাঁকে আজ সকালে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে তরুণীর পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।
এদিকে থাই কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি নিয়ে ‘গল্প’ বানাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এশিয়ার উপপরিচালক ফিল রবার্টসন। বিবিসিকে তিনি বলেন, দেখে মনে হচ্ছে, থাই কর্তৃপক্ষ একটি গল্প বানানোর চেষ্টা করছে যে ওই তরুণী ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন, কিন্তু পাননি। অথচ ওই তরুণীর অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার টিকিট রয়েছে এবং তিনি থাইল্যান্ডে প্রবেশ করতেও চাননি।
ফিল রবার্টসনের মতে, সৌদি কর্তৃপক্ষকে থাই কর্তৃপক্ষ স্পষ্টই সহায়তা করেছে, যাতে বিমানটি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সৌদি কর্মকর্তারা তরুণীর দেখা পান।
রাহাফ বিবিসিকে আরও বলেছেন, ‘আমি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে আমার কথা, ছবি পোস্ট করেছি। এতে আমার বাবা অনেক রেগে গিয়েছিলেন। নিজের দেশে আমি পড়তে পারি না, কাজ করতে পারি না। আমি মুক্তভাবে চলতে চাই, পড়তে চাই এবং আমার ইচ্ছে মতো কাজ করতে চাই।’ রাহাফ টুইটারে লিখেছেন, তিনি তাঁর নাম ও বিস্তারিত সবকিছু জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ, তাঁর ‘হারানোর কিছু নেই’। তিনি বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি তাঁকে আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাহাফর ঘটনাটি আরেক সৌদি তরুণী দিনা আলী লাসলুমের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে ২৪ বছর বয়সী দিনাকেও এভাবে ফিলিপাইনের ম্যানিলা বিমানবন্দরে আটক করা হয় এবং ফিরিয়ে দেওয়া হয় পরিবারের কাছে। তিনি কানাডার পর্যটক ফোন ব্যবহার করে টুইটারে বিভিন্ন বার্তা ও ভিডিও প্রকাশ করতেন। পরিবার তাঁকে মেরে ফেলবে বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছিলেন দিনা। সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার পর তাঁর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা আর জানা যায়নি।