বসসহ ২০ জনের হত্যাকারী থাই সেনা পুলিশের গুলিতে নিহত
থাইল্যান্ডে নিজের কমান্ডিং কর্মকর্তাসহ ২০ জনকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যার পর হামলাকারী সেনাসদস্য জাকরাফান্ত থোম্মা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। থাই পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জাকরাফান্ত থোম্মা (৩২) তাঁর কমান্ডিং কর্মকর্তাকে হত্যার পর সামরিক শিবির থেকে অস্ত্র নিয়ে পালান এবং শহরে টার্মিনাল ২১ নামে একটি শপিং সেন্টারে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকেন। গতকাল শনিবার থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর নাখন র্যাটচেসিমা যেটি কোরাত নামেও পরিচিত সেখানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। তাঁর হামলার উদ্দেশ্যে এখনো স্পষ্ট নয়।
আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় আজ সকাল সাড়ে নয়টায় পুলিশ নিশ্চিত করে, বন্দুকধারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তবে এই অভিযানের ব্যাপারে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য দেয়নি পুলিশ।
থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনায় হামলাকারীসহ নিহত মানুষের সংখ্যা এখন ২১। আহত হয়েছেন ৪২ জন। মৃত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় গতকাল বেলা তিনটার দিকে গুলিবর্ষণ শুরু হলে শপিং সেন্টারটি ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। তাঁরা বন্দুকধারী সেনাসদস্যকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। ওই সময় বন্দুকধারীর গুলিতে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য নিহত হন এবং দুজন আহত হন। শপিং সেন্টার থেকে বেশ কয়েকজন মানুষকে বের করে আনা হয়। তবে হামলাকারীর হাতে আরও অনেকে জিম্মি রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হয়।
দেশটির জনস্বাস্থ্যমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল আজ সকালে তাঁর ফেসবুক পেজে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতার প্রশংসা করে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতির সমাপ্তি টানার জন্য পুলিশ ও সেনাদের ধন্যবাদ। শ্যুটার নিহত!’
এর আগের প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দুকধারী সেনাসদস্য ভবনের পেছন দিক দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। প্রথমে তাঁকে নিবৃত্ত করার জন্য তাঁর মাকে শপিং সেন্টারে নিয়ে আসা হয়।
শপিং সেন্টার থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে বেরিয়ে আসা এক নারী জানান, তিনিসহ কয়েকজন ভবনের পঞ্চম তলার একটি বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন।
গতকাল বিকেলে কোরাত শহরের সুয়াথাম ফিটাক সেনাশিবির থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত। সেনাশিবিরের মধ্যেই কমান্ডিং কর্মকর্তা কর্নেল আনানথারোট ক্রাসেকে গুলি করে হত্যা করেন জাকরাফান্ত থোম্মা। এরপর তাঁর অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে সেনাশিবির থেকে বেরিয়ে যান। বের হওয়ার আগে শিবির থেকে আরও কিছু অস্ত্র নিজের সঙ্গে নিয়ে যান।
হামলার পরপরই ওই সেনাসদস্যকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ উল্লেখ করে থাই পুলিশ তাদের ফেসবুক পেজে ছবিসহ পোস্ট দেয়।
প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখেন। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।
সরকারের এক মুখপাত্র ক্রিসানা পাত্তানাচারিওন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, হামলাকারী একটি মেশিনগান দিয়ে নির্দোষ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালান। অনেক মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন এ ঘটনায়।
ঘটনার পর শহরবাসীকে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেয় থাই পুলিশ। ব্যাংকক পোস্ট জানায়, ওই সেনাসদস্য শপিং মলের ভেতরেই কয়েকজনকে জিম্মি করে রাখেন।
এর আগে ঘটনার পরপর তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কংচিপ তন্ত্রভানিক বিবিসিকে জানান, হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগে কমান্ডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান থোম্মা। কিছুক্ষণ পর শহরের একটি বৌদ্ধ মন্দির ও শপিং মলে গিয়ে নির্বিচারে গুলি ছোড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই ১২ জন নিহত হন। এ সময় আহত হন আরও অনেকে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, একটি শপিং মলের সামনে গাড়ি থেকে নামেন জাকরাফান্ত থোম্মা। তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমেই সামনে থাকা লোকজনকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি শুরু করেন তিনি। এ সময় তাঁর গুলিতে শপিং মলের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়।
হামলা চালানোর সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টও দিয়েছেন জাকরাফান্ত থোম্মা। গুলিবর্ষণের পর এক পোস্টে তিনি জানতে চান, তাঁর এখন আত্মসমর্পণ করা উচিত কি না। এর আগে ফেসবুকে একটি পিস্তল ও তিনটি গুলির ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘এখন রোমাঞ্চিত হওয়ার সময়। কেউ মৃত্যু এড়াতে পারবে না।’
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাঁর অ্যাকাউন্টটি আপাতত নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। নৃশংস এ ঘটনায় একটি বিবৃতিও দিয়েছে ফেসবুক। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘এ ধরনের নৃশংস কাজ যারা করে, ফেসবুকে তাদের কোনো জায়গা নেই। নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই।’