ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরব পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে যাচ্ছে বলে বেশ কিছুদিন ধরে গুঞ্জন রয়েছে। তবে সেই গুঞ্জন নাকচ করে দিয়েছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ। গত শুক্রবার তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হলেই কেবল ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে রিয়াদ।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইতালির রোমে মেডিটেরিয়ান ডায়ালগস (এমডি) নামের আন্তর্জাতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেন প্রিন্স ফয়সাল ফারহান। সেখানে তিনি বলেন, ‘এমন একটি শান্তিচুক্তি (ইসরায়েলের সঙ্গে) প্রয়োজন, যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ ও কার্যকর সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। ১৯৬৭ সালের সীমান্ত এলাকা ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা আছে সৌদি আরবের।’
প্রিন্স ফয়সাল আরও বলেন, (সৌদি-ইসরায়েল) চুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একটি ন্যায্য চুক্তি অর্জনের জন্য ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনা।
কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে গত সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করে দুই আরব দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন। তখন থেকে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়, সৌদি আরবও আমিরাত ও বাহরাইনের পথে হাঁটছে। আব্রাহাম অ্যাকর্ডস নামের ওই চুক্তি হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতায়। চুক্তির শর্ত হচ্ছে, ফিলিস্তিনি ভূমি আর দখলে নেবে না ইসরায়েল। ওই চুক্তির পর প্রথমবারের মতো সৌদি আরবের আকাশসীমা ব্যবহার করে ইসরায়েলের একটি ফ্লাইট যায় আরব আমিরাতে। ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা এই চুক্তিকে ফিলিস্তিনিদের পিঠে ছুরিকাঘাত বলে অভিহিত করেন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত বন্ধে সৌদি আরব ২০০২ সালে পিস ইনিশিয়েটিভ নামের একটি প্রস্তাব তুলে ধরে। সেটি ওই বছরই অনুমোদন করে আরব লিগ। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের দখল করা সব জমি ছেড়ে দিলেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে আরব দেশগুলো। এর আগে নয়। কিন্তু ফিলিস্তিনি ভূমি দখল অব্যাহত রাখার পরও সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তিতে যায় আমিরাত ও বাহরাইন।
সৌদি আরব-কাতার দ্বন্দ্ব মিটছে শিগগিরই
এদিকে সৌদি আরবের সঙ্গে কাতারের দ্বন্দ্বের অবসান হতে চলেছে শিগগিরই। মেডিটেরিয়ান ডায়ালগে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফারহান আল সৌদ এই কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিনে আমরা বেশ ভালো অগ্রগতি করেছি। আমরা আশা করছি, এই অগ্রগতি একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে নিয়ে যাবে। আমি আশাবাদী, বিবদমান সব দেশের মধ্যে একটি চূড়ান্ত চুক্তির খুব কাছে রয়েছি আমরা। এই চুক্তি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করি।’
তিন বছর আগে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে কাতারকে বর্জন করে সৌদি আরব। রিয়াদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাহরাইন, মিসর ও আমিরাত। কাতারের সঙ্গে ওই চার দেশের দ্বন্দ্ব মেটাতে মধ্যস্থতা করছেন কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ নাসের আল-সাবাহ।